বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রায়ই মাইক বাজতে দেখা যায়। অনেক সময় ধর্মীয় স্থানেও মাইকের ব্যবহার হয়। এই নিয়ে একটি মামলা হয়েছিল। এবার তার প্রেক্ষিতেই পুলিশকে বড় নির্দেশ দিয়ে দিল হাইকোর্ট (High Court)। ধর্ম সাধনা কিংবা ধর্মীয় কোনও অনুষ্ঠান অথবা ধর্মের জন্য মাইক বাজানো জরুরি না। এক কথায়, ধর্মের সঙ্গে মাইক বাজানোর সম্পর্ক নেই বলে জানিয়ে দিল উচ্চ আদালত।
পুলিশকে বড় নির্দেশ দিয়ে দিল হাইকোর্ট (High Court)!
জানা যাচ্ছে, জাগো নেহেরু নগর রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের একটি আর্জির ভিত্তিতে হাইকোর্টে শুনানি চলছিল। সংগঠনের আইনজীবী কৌশিক মাহত্রে আবেদন জানান, মুম্বইয়ের পূর্ব কুরলার নেহরু নগর এবং চুনাভাট্টি অঞ্চলে বেশ কিছু মসজিদ ও মাদ্রাসা আসে। সেই মসজিদগুলিতে লাউডস্পিকার (Loudspeaker) লাগানো রয়েছে। সেগুলির আওয়াজ এলাকাবাসীর কাছে কার্যত অসহ্য হয়ে উঠেছে।
জানা যাচ্ছে, আইনজীবী আবেদন জানান, সকাল ৫টা থেকে অনেক সময় মাইক বাজানো শুরু হয়। যে সময় মাইক বাজানো আইনত নিষিদ্ধ। এছাড়া উৎসবের সময় রাত দেড়টা অবধি মাইক বাজানো হয় বলে অভিযোগ। সবটাই হয় বিধিবদ্ধ শব্দমাত্রার থেকে বহু জোরে। বৃহস্পতিবার বম্বে হাইকোর্টের (Bombay High Court) বিচারপতি এএস গড়করি ও এসসি চন্দকের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। তাতেই বড় নির্দেশ দেয় আদালত।
আরও পড়ুনঃ দার্জিলিংয়ের ভাবছেন, অথচ কিনছেন নেপালের চা? এবার কড়া নির্দেশ দিয়ে দিলেন মমতা
হাইকোর্টের (High Court) পর্যবেক্ষণ, কোনও ধর্মেই লাউডস্পিকার বাজানো আবশ্যক অংশ নয়। আদালতের নির্দেশ, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো রোধে পুলিশকে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজ্য সরকার ও পুলিশকে উচ্চ আদালতের নির্দেশ, লাউডস্পিকার এবং বক্স আইটেমে অভ্যন্তরীণ নির্মাণ প্রযুক্তি কৌশল ব্যবহার করে শব্দের ডেসিবেল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মন্দির, মসজিদ থেকে শুরু করে গির্জা- ধর্মনিরপেক্ষভাবে সকল প্রার্থনাস্থলের মাইকগুলিতে এমন কিছু যন্ত্র বসাতে হবে যার ফলে আওয়াজ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বম্বে হাইকোর্টের (High Court) নির্দেশ, পুলিশের হাতে শব্দআইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। শব্দদূষণ বিধি, ২০০০ প্রয়োগ এবং কড়াভাবে সেটি মান্য করার অধিকার পুলিশের কাছে দেওয়া আছে। ফলে কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অধিকার নেই, লাউডস্পিকার বাজিয়ে শব্দদূষণ ঘটানোর। পুলিশের পাশাপাশি রাজ্য সরকারকেও এই নিয়ে বড় নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।
জানা যাচ্ছে, রাজ্যকে (Government of Maharashtra) বলা হয়েছে, পুলিশকে ডেসিবেল মাপার যন্ত্র দিতে হবে। ফলে যেখানেই মাইক বাজবে, সেখানেই তাঁরা যন্ত্র নিয়ে গিয়ে ডেসিবেল মাপতে পারবে। হাইকোর্টের নির্দেশ, যেখানেই এই ধরণের ঘটনা ঘটবে, সেখানেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মাইক ব্যবহার করার অনুমতিও ফিরিয়ে নিতে পারে।
এই মামলার শুনানির সময় আইনজীবী মাহত্রে হাইকোর্টে জানান, নেহরু নগর বা চুনাভাট্টি থানায় এই নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। আদালতের বক্তব্য, সাধারণত এলাকাবাসী এই ধরণের ঘটনায় ভয়ভীতির কারণে অভিযোগ জানান না। যতক্ষণ অবধি সহ্যসীমার বাইরে না যাচ্ছে, ততক্ষণ অবধি তাঁরা বরদাস্ত করেন। তবে দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলে, অভিযোগ অবধি অপেক্ষা করা নয়। নির্দিষ্ট অভিযোগের আগেই পুলিশকে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই মামলার শুনানিতে প্রত্যেক পক্ষের বক্তব্য শোনার পর হাইকোর্ট (High Court) বলে, মুম্বই হল একটি মিশ্র জনজাতির শহর। এই শহরে নানান ধর্ম-ভাষার মানুষ বাস করেন। আবেদনকারীদের আবেদন শব্দদূষণ নিয়ে এদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ও এই আদালতের আগের নির্দেশগুলি কার্যকর করা হোক।