বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সরগরম রাজ্য। সুপ্রিম কোর্টে এখনও শুনানি চলছে নিয়োগ মামলার। যার ফলে কার্যত প্রশ্নের মুখে রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিজীবী শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ। অন্যদিকে নিয়োগ বন্ধ থাকায় ঘোর অনিশ্চয়তায় ডুবেছে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা। তবে এই মুহূর্তে বঙ্গবাসীর প্রশ্ন একটাই, যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের চাকরি থাকবে তো? নাকি পুরো প্যানেলটাই বাতিল হয়ে যাবে? প্রসঙ্গত ২০২২ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে জেলবন্দী রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী। তবে তিনি একা নন। মাকড়শার জালের মতো ছড়িয়ে পড়া এই নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে আরও অনেক হেভিয়েটদের। এসবের মাঝে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) মামলায় সম্প্রতি এসেছে নতুন মোড়। সম্প্রতি এই সমস্ত প্রভাবশালীদের একটি তালিকা প্রকাশ্যে এনেছে সিবিআই।
TET দুর্নীতিতে ‘প্রভাবশালী যোগ’! (Recruitment Scam)
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি তালিকায় থাকা এই প্রভাবশালীরাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে চাকরিপ্রার্থীদের নাম সুপারিশ করতেন। তালিকা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে ই শুরু হয়েছে ব্যাপক জল্পনা। গতবছরই বিকাশ ভবনে অভিযান চালিয়ে এই সুপারিশ তালিকা হাতে পেয়েছিল সিবিআই। সম্প্রতি সেই নথি প্রকাশ্যে আসতেই দেখা যাচ্ছে সেখানে নাম রয়েছে, দিব্যেন্দু অধিকারী, ভারতী ঘোষ,মমতাবালা ঠাকুর, শওকত মোল্লাদের।
সিবিআই-এর পেশ করার নথিতে দেখা যাচ্ছে কে বা কারা কত জন চাকরিপ্রার্থীর নাম সুপারিশ করেছেন এবং তাদের মধ্যে কারা বর্তমানে চাকরি করছেন। জানা যাচ্ছে সুপারিশের তালিকায় থাকা মোট ১৩৪ জন চাকরিপ্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল এই প্রভাবশালী তালিকায় কারা রয়েছেন? নথিতে যে নামগুলোর উল্লেখ রয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম দিব্যেন্দু অধিকারী, ভারতী ঘোষ মমতাবালা ঠাকুর, শওকত মোল্লা, বীনা মন্ডল, নির্মল ঘোষ, শ্যামল সাঁতরা,রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস,গুলশান মল্লিক, মিহির গোস্বামী প্রমুখ।
কোন হেভিওয়েট কতজনের নাম সুপারিশ করেছিলেন? এবং তাদের মধ্যে কত জনের চাকরি হয়েছে?
তালিকায় এমপি বলে উল্লেখিত দিব্যেন্দু অধিকারী, মোট ১১ জনের নাম সুপারিশ করেছিলেন তাদের মধ্যে চাকরি পেয়েছেন পাঁচজন। মমতা বালা ঠাকুর, তাঁর নামও এমপি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি মোট কুড়িজনের নাম সুপারিশ করেছিলেন তাদের মধ্যে থেকে দুজন চাকরি পেয়েছেন। তৎকালীন এসপি বলে পরিচিত ভারতী ঘোষ মোট ৪ জনের নাম সুপারিশ করেছিলেন। তাঁদের তাদের মধ্যে তিনজন চাকরি পেয়েছেন। শওকত মোল্লা দুজনের নাম সুপারিশ করেছিলেন তারা কেউ চাকরি পাননি। বীনা মণ্ডল এমএলএ ১৩ জনের নাম সুপারিশ করেছিলেন ৬ জন চাকরি পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘মাত্র তিন কোটি টাকাই লাগবে’, শহরে ট্রাম বাঁচাতে এবার রাজ্যকে বড় নির্দেশ হাইকোর্টের
এখানেই শেষ নয়। তালিকায় রয়েছেন এমএলএ নির্মল ঘোষ। তিনি মোট ১৬ জনের নাম সুপারিশ করেছিলেন। তাদের মধ্যে ৬ জন চাকরি পেয়েছেন। শ্যামল সাঁতরা এমএলএ,২২ জনের নাম সুপারিশ করেছিলেন তার মধ্যে তিনজন চাকরি পেয়েছেন। রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এমেলএ পাঁচজনের নাম সুপারিশ করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন চাকরি পেয়েছেন। গুলশান মল্লিক এমএলএ দশজনের চাকরি সুপারিশ করেছিলেন তাদের মধ্যে চারজন চাকরি পেয়েছেন। মিহির গোস্বামী মেম্বার একজনের নাম সুপারিশ করেছিলেন তিনিও চাকরি পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের প্রাথমিকের পরীক্ষায় নিয়োগ-দুর্নীতির (Recruitment Scam) অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনার পর অভিযোগে ২০২২ সাল থেকে তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। প্রভাবশালীদের এই নামের তালিকা সুপারিশ করেছিলেন তারও আগে। এখানে বলে রাখা ভালো ২০১৮ সালে দিব্যেন্দু অধিকারী বা ভারতী ঘোষ কেউই বিজেপিতে ছিলেন না। তালিকায় নাম রয়েছে তৎকালীন এম এল এ’র তথা নাটাবাড়ির বর্তমান বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামীর। ২০২১ সালের আগে তিনিও তৃণমূলে ছিলেন। এখন দেখার এই সমস্ত চাকরি প্রার্থীরা সবাই কি সুপারিশে চাকরি পেয়েছেন? নাকি নিজস্ব যোগ্যতায়?