লাখপতি বানিয়ে দেওয়া এই গাছ ভুলেও লাগাবেন না জমিতে! নাহলেই পড়বেন বড় বিপদে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে চাষাবাদের পাশাপাশি অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য কৃষকরা প্রায়শই তাঁদের জমির আশেপাশে বিভিন্ন প্রজাতির লাভজনক গাছ (Plant) লাগিয়ে দেন। এমতাবস্থায়, ওই ধরণের গাছগুলি সাধারণত দেড় থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই বড় হয়ে যায়। এদিকে, কিছু গাছ আছে যেগুলির ক্ষেত্রে সঠিক যত্ন, সার ও জলের প্রয়োজন হয়। অপরদিকে, কিছু কিছু গাছ আবার ধীরে ধীরে নিজেরাই বাড়তে শুরু করে। এই সব গাছের কাঠ বাজারে বিক্রি করা হয় ভালো দামে। আর এভাবেই কৃষকেরা বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়ে যান।

তবে, এমনও কিছু গাছ আছে যেগুলো ভুল করেও জমিতে লাগানো উচিত নয়। অন্যথায় সেগুলি বড়সড় ক্ষতি করে দেয়। মূলত, ওই গাছগুলি জমির উর্বরতা শক্তিকে নষ্ট করে ফেলে। আর ওইরকমই এক গাছ হল ইউক্যালিপটাস (Eucalyptus Tree)। পাশাপাশি, এই গাছটি নীলগিরি গাছ (Neelgiri Tree) নামেও পরিচিত। না জেনে এই গাছ চাষযোগ্য জমিতে লাগিয়ে ফেললে থাকে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা। এমতাবস্থায়, সেই প্রসঙ্গটিই বর্তমান প্রতিবেদনে উপস্থাপিত করা হল।

মাটি থেকে জল শোষণ করে নেয়: উদ্ভিদবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানোর ৫ বছর পরে এটি তার পূর্ণ রূপ ধারণ করে। অর্থাৎ ততদিনে গাছটি একটি ২৫-৩০ ফুট লম্বা গাছে পরিণত হয়। যা বিক্রি করে আপনি ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারেন। কিন্তু উপার্জন হলেও এই গাছ মাটিতে উপস্থিত জল ও মাটির পুষ্টিগুণকে কমিয়ে ফেলে। এই গাছের দৈনিক ১২ লিটার জল এবং প্রচুর পুষ্টির প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, যখন পর্যাপ্ত জল পাওয়া যায় না, তখন ইউক্যালিপটাস গাছের শিকড়গুলি ভূগর্ভস্থ জল শোষণ করতে শুরু করে। যার কারণে ওই এলাকার ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নিচে নেমে যায়।

অনেক এলাকায় এই গাছ লাগানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে: দেখা গেছে, যেসব এলাকায় ইউক্যালিপটাস গাছের চাষ হচ্ছে, সেইসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলের স্তর অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেকটাই নিচে চলে গিয়েছে। এমতাবস্থায়, এহেন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের তরফে সেইসব এলাকাকে বিপজ্জনক এলাকা ঘোষণা করে সেখানে এই গাছ লাগানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, এই ধরণের গাছ লাগানোর পর সেই মাটি আর অন্যান্য চাষের ক্ষেত্রে উপযোগী থাকে না। পাশাপাশি, মাটির গুণাগুণও নষ্ট হয়ে যায়।

ভারতবর্ষে এই প্রথা শুরু করেছিল ব্রিটিশরা: এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, এই গাছের চাষের প্রথা ব্রিটিশরা শুরু করেছিল। মূলত, জলজ এলাকা শুকোনোর জন্য ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো শুরু করা হয়। ফলে ওইসব এলাকায় জল ও আর্দ্রতার পরিমাণ কমে আসে। এদিকে, এই গাছের দৈর্ঘ্য বাকি গাছের তুলনায় অনেক বেশি হয়। যার কারণে এখান থেকে প্রচুর পরিমানে কাঠ পাওয়া যায়।

photo 1509414556967 312906f278a0

শুধুমাত্র এই ধরণের এলাকায় ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো যেতে পারে: বর্তমান সময়ে প্রায় সর্বত্র ভূগর্ভস্থ জলের স্তর অনেকটাই নিচে নেমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে এই গাছ লাভের পরিবর্তে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ কৃষক এখন এই গাছ লাগানো থেকে বিরত থাকছেন। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন শুধুমাত্র খাল, পুকুর, নদী বা জলাভূমির কাছে লাগানোর কথা ভাবলেই এই গাছ লাভজনক বলে বিবেচিত হতে পারে। তবে, অন্য জায়গায় এই গাছ লাগানো হলে তা জমিকে অনুর্বর করে দিতে পারে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর