অভাবের সংসার, সরকারি সাহায‍্যও নেই, এখনকার হাস‍্যকর অসুরদের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছেন দূরদর্শনের প্রথম মহিষাসুর

বাংলাহান্ট ডেস্ক: মহালয়ার (Mahalaya) সঙ্গে বাঙালির আত্মিক যোগ সেই আদ‍্যিকাল থেকে। কিংবদন্তি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র চণ্ডীপাঠ শুনে আগেও মহালয়ার ভোর হত, এখনো হয়। পরিবর্তন শুধু, বর্তমানের বোকা বাক্সর দাপট। হরেক চ‍্যানেলের হরেক রকম মহালয়া অনুষ্ঠানের মাঝে অনেক দর্শকের কাছে পুরনো আমেজটাই হারিয়ে গিয়েছে।

দূরদর্শনে প্রথম শুরু হয়েছিল মহালয়ার অনুষ্ঠান। কোনো রকম বাহুল‍্য, চাকচিক‍্য, ভিএফএক্সের কারিকুরি ছাড়াও এই দিনটার মাহাত্ম‍্য সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হত। দর্শকরা দম বন্ধ করে বসে দেখতেন পর্দায় মা দূর্গা এবং মহিষাসুরের (Mahishasura) ভয়ঙ্কর লড়াই। দূরদর্শনের অনুষ্ঠানে প্রথম মা দূর্গার ভূমিকায় অভিনয় করেন সংযুক্তা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়। আর মহিষাসুর অমল চৌধুরী (Amal Chowdhury)।

amal chowdhury mahishasura
বড় বড় চোখ, ঝাঁকড়া চুল আর মোটা পাঁকানো গোঁফ, যুদ্ধের বর্ম আর শিরস্ত্রাণ পরে এই লুকেই দেখা যেত মহিষাসুরকে। ভয়ঙ্কর দেখানোর জন‍্য কোনো রকম মেকআপের আধিক‍্য ছিল না, অসুরের সাঙ্গপাঙ্গদের দেখেও হাসির উদ্রেক হত না দর্শকদের। বরং মনে জাগত ভয় মেশানো উত্তেজনা।

এমন চেহারা ঈশ্বরপ্রদত্ত ছিল অমল চৌধুরীর। তাই প্রত‍্যেক বছরে তাঁকেই দেখা যেত দূরদর্শনে মহিষাসুরের ভূমিকায়। প্রথম বারও দেখা গিয়েছিল তাঁকেই। অশোকনগরের বাসিন্দা অমল চৌধুরীর নামই হয়ে গিয়েছিল ‘অমল অসুর’। ছোটরাও তাঁর চেহারা দেখে ভয় পেত।

দুজন টেকনিশিয়ানের নজরে পড়ে যাওয়ায় পর্দার মহিষাসুর হয়ে ওঠার সুযোগ হয় অমল চৌধুরীর। পাশাপাশি যমরাজের ভূমিকাতেও অভিনয় করেছেন তিনি। প্রথম সারির পরিচালক, অভিনেতাদের ছবিতে কাজ করেছেন। কিন্তু অলিখিত নিয়মানুসারে, পুরনো সবকিছুরই জায়গা নেয় নতুনরা।

এক সময়কার ভয় ধরানো মহিষাসুরের আজ আর ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা নেই। অবিবাহিত অমল চৌধুরীর অভাবের সংসারে সদস‍্য শুধু তিনি নিজে আর এক ছোট বোন। আত্মীয়রা দেখে না। ইন্ডাস্ট্রি থেকেও আর ডাক আসে না। পেটের ভাত জোগাতে অমল অসুর এখন আঁকার টিউশনি করান। অভিনয় কবেই হারিয়ে গিয়েছে তাঁর জীবন থেকে।

Amal chowdhury mahishasura 1
এক সময়ে এই অভিনয়ের জন‍্যই কত কদর ছিল অমল চৌধুরীর। দূরদর্শন, বাংলা সিনেমায় অভিনয় বলে কথা। পাশাপাশি অশোকনগরে নাট‍্য চর্চাতেও সম্মান পেতেন তিনি। সেসব দিন যেতেই মুখ ফিরিয়ে সবাই। বয়সের ভারে সব হারালেও বড় বড় চোখ আর পাকানো গোঁফ এখনো ছেড়ে যায়নি অমল চৌধুরীকে।

সুদিন সবই গিয়েছে। সরকারি সাহায‍্য মেলে না। তবুও মহালয়া আসার আগেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে অমল অসুরের। এখন বিভিন্ন চ‍্যানেলের অনুষ্ঠানে অসুরদের সাজ দেখে হাসাহাসি করে মানুষ। মহালয়া যেন একটা ‘ছেলেখেলা’য় পরিণত হয়েছে। সাজসজ্জা আর ভিএফএক্সের আধিক‍্যের মাঝেই এখনো পুরনো দিনের দর্শকরা খুঁজে বেড়ান তাদের অমল অসুরকে।

Avatar
Niranjana Nag

সম্পর্কিত খবর