শারীরিক প্রতিবন্ধকাতে হার মানিয়ে লক্ষ্যে অবিচল ‘বাংলার মেয়ে”, পেয়েছেন অনন্য সম্মানও

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কথায় বলে, শারীরিক প্রতিবন্ধতা আবার কোন বাঁধা হয় নাকি? মনের জোর থাকলেই যে কোন কাজে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। শুধুমাত্র নিজের লক্ষ্যটা স্থির রাখতে হবে। আর সেই পথেই এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে ঠিকই নিজের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব। আর এই কথাটাই যে ধ্রুব সত্যি, তা প্রমাণ করে দেখাল দুর্গাপুরের (Durgapur) বিধাননগরের দেবস্মিতা নাথ।

২০০১ সালের ১৬ ই এপ্রিল বাবা দেবাশিস নাথ এবং মা সুমিতা নাথের ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছিল দেবস্মিতা। জন্মটা আর পাঁচটা সাধারণ বাচ্চার মত করে হলেও, দেবস্মিতার বেড়ে ওঠাটা কিছু অস্বাভাবিক ছিল। যেমন, যে বয়সে বাচ্চারা হামাগুড়ি দিতে শেখে, তখনও দেবস্মিতাকে বালিশ ঠেকা দিয়ে বসিয়ে রাখতে হত। মুখ থেকে লালা ঝড়ে পড়ত।

vbbbbv Copy

এভাবে কিছু দিন যাওয়ার পর বাবা দেবাশিস নাথ এবং মা সুমিতা নাথ তাঁদের মেয়েকে নিয়ে চাইল্ড স্পেশালিস্টকে দেখান। কিন্তু সেই চাইল্ড স্পেশালিস্ট তখন দেবস্মিতার জন্য একজন নিউরোলজিস্টকে দেখাতে বলেন। কলকাতার বনহুগলি থেকেই জানতে পারেন ছোট্ট মেয়েটি সেরিব্রাল ওপালসি নামক স্নায়ুর একটি বিরল রোগে আক্রান্ত, যেখানে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এরপর ভেঙে না পড়ে থমাস জোসেফ নামে এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে দেবস্মিতাকে নিয়ে গেলে, তিনি ফিজিওথেরাপি করানোর এবং ৩ বছর বয়সে সাঁতারে দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। সেইসঙ্গে আর পাঁচটা বাচ্চাদের মত সাধারণ স্কুল এবং তাঁকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে বলেন।

bbbvb Copy

এইভাবে সেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতই চলতে থাকেন তাঁরা। ভর্তি করা সাধারণ স্কুলে, যার কারণে নানারকম সমস্যাও পেরোতে হয় তাঁদের। এইভাবে একদিন স্কুলের একটি প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি (Recitation) করে, দ্বিতীয় পুরস্কার নিয়ে আসে দেবস্মিতা। তারপরই সেইদিকে তাঁর ঝোঁক থাকায় একজন শিক্ষিকাও রাখেন। এভাবে বিভিন্ন ছোট খাটো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সর্বদাই পুরস্কার নিয়ে আসত দেবস্মিতা, অনুষ্ঠান করত টিভি চ্যানেলেও।

এরপর ১৩ বছর বয়সে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওয়ার্কশপ করার সুযোগ পায় দেবস্মিতা। তারপর তাঁরই কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগও পায়। ধীরে ধীরে জগন্নাথ বসু, উর্মিমালা বসুর মত বিখ্যাত ব্যক্তিদের সান্নিধ্যও পায় দেবস্মিতা। এগিয়ে যায় জীবনের লক্ষ্যে। শারীরিক কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকায় বসে বসেই সে তাঁর আবৃত্তি পরিবেশন করে থাকে।

bbvbvb Copy

এরপর মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ভাবনা রেকর্ডসের হাত ধরে কলকাতা প্রেস ক্লাবে বিভিন্ন গুণী মানুষের উপস্থিতিতে প্রথম সিডি রিলিজ হয় দেবস্মিতার। তারপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। প্রথম জীবনটা সুখকর না হলেও, ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাফল্য আসতে থাকে দেবস্মিতার।

আর এই বয়সেই নানাবিধ সম্মানে সম্মানিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করছেন দুর্গাপুরের দেবস্মিতা। এমনকি বর্তমানে G.N.U ইউনিভার্সিটি থেকে ইংলিশ অনার্স পড়ার পাশাপাশি সেও আবার কিছু বাচ্চাকে আবৃত্তি প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু করেছে।

Avatar
Smita Hari

সম্পর্কিত খবর