এখনও “জীবিত” মঙ্গলযান! আয়ু শেষ হওয়ার পরেও দেশের জন্য এইভাবে করবে কাজ

বাংলা হান্ট ডেস্ক: আয়ু ফুরিয়ে গেলেও অদ্ভুতভাবে সক্রিয় থাকবে মঙ্গলযান (Mangalyaan)। মূলত মঙ্গলযান অর্থাৎ মার্স অরবিটার মিশনে (Mars Orbiter Mission, MOM) মাত্র পাঁচটি পেলোডস (Payloads) ছিল। যেগুলির ওজন ছিল প্রায় ১৫ কেজি। ওই পেলোডসগুলি মঙ্গল গ্রহের ভৌগোলিক, বাইরের স্তর, বায়ুমণ্ডলীয় প্রক্রিয়া এবং পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সম্পর্কিত অনুসন্ধানের কাজ করত। পাশাপাশি, মঙ্গলযান তৈরির সময় তৎকালীন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয় সেটিকে। যার ফলে সেটি দূর থেকেই মঙ্গল গ্রহের গতিবিধি পরীক্ষা করতে পারত। এমতাবস্থায়, পরবর্তীকালে মঙ্গলযানে ব্যবহৃত পেলোডসের প্রযুক্তি বিভিন্ন স্যাটেলাইটেও ব্যবহার করা হয়েছে।

মঙ্গলযানে থার্মাল ইনফ্রারেড ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার নামের একটি পেলোড ছিল। এটি হল এক ধরণের থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা। এর কাজ ছিল কোনো স্থানে থাকা তাপকে অনুধাবন করা। এটি সাধারণত থার্মাল ইনফ্রারেড ক্যামেরা (TIR) নামেও পরিচিত। ​এই ক্যামেরা রাতে কাজ করে। এদিকে, পৃথিবীর প্রতিটি জীবের একটা তাপমাত্রা আছে। এমতাবস্থায়, তাপমাত্রার ভিত্তিতে সেই বস্তু বা জীবের আকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব।

মাটির নিচেই হোক কিংবা লোহার বাঙ্কারে যে কোনো জায়গায় থাকলেও এই ক্যামেরার সাহায্যে তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায়। আমাদের দেশের যেসব স্যাটেলাইটে রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়, সেখানে এই ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। রিমোট সেন্সিং মানে হল দূর থেকে কিছু অনুধাবন করা। এই প্রযুক্তি আবহাওয়া সংক্রান্ত উপগ্রহে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি, EOS বা মাইক্রোস্যাটের মতো কার্টোগ্রাফি স্যাটেলাইটও এই তালিকায় রয়েছে। এছাড়াও, সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত উপগ্রহ ওশানস্যাটেও ব্যবহার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, কার্টোস্যাট সিরিজের স্যাটেলাইট ভূমির ব্যবহার ও ম্যাপিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত স্যাটেলাইটে থার্মাল ইনফ্রারেড ইমেজিং সেন্সরও স্থাপন করা হয়। নাহলে এর পরিবর্তে সেখানে ক্যামেরা লাগানো থাকে। এদিকে, মঙ্গলযানে থাকা দ্বিতীয় সবচেয়ে শক্তিশালী পেলোড ছিল মার্স কালার ক্যামেরা। অর্থাৎ এর সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের প্রকৃত রঙে ছবি তোলা এবং এর আকার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এটি এমন একটি ডিভাইস যা সাধারণ ক্যামেরার মতো কাজ করে।

ভারতের অনেক স্যাটেলাইটে এই ধরণের ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রিসোর্স্যাট সিরিজের স্যাটেলাইট। মূলত, এর মধ্যে একটি দৃশ্যমান ক্যামেরা রয়েছে। যেখানে আবহাওয়া, পরিবেশ, বন এবং ভূমির সাধারণ ছবি তোলা যায়। এই ক্যামেরাগুলো প্রায়ই দিনের বেলায় কাজ করে। এসব ক্যামেরা রাতে কাজ করে না। ভবিষ্যতে, ISRO-র অন্যান্য আসন্ন মিশনেও এই যন্ত্রগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে।

10353451 1542195052670518 5343368552581157452 o

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, চন্দ্রযান-৩-তে টেরেন ম্যাপিং ক্যামেরা (টিএমসি) বসানো হবে। যাতে চাঁদের পৃষ্ঠের সঠিক ছবি তুলতে পারা যায়। এটি অনেকটা মার্স কালার ক্যামেরার মতোই কাজ করবে। কারণ, উভয়ের প্রযুক্তি প্রায় একই রকম। এছাড়াও, মঙ্গলযানে থাকা মিথেন সেন্সর ফর মার্স পেলোডের সাহায্যে ভবিষ্যতে মহাকাশের অন্যান্য গ্রহের অনুসন্ধান করা বা এটি চন্দ্রযান মিশনেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে যে কোনো গ্রহে প্রাণের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে এরকম কিছু স্যাটেলাইট এবং মহাকাশযান পাঠানো হবে যেটিতে এক্সোস্ফিয়ারিক নিউট্রাল কম্পোজিশন অ্যানালাইজার এবং আলফা ফটোমিটারের প্রযুক্তিও ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ, মঙ্গলযানের সমস্ত অংশ ভবিষ্যতের মিশনে কোনো না কোনো ভাবে ব্যবহার করা হবে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর