অষ্টম শ্রেণিতে ফেল করায় পরিহাস করত সবাই, আজ ২ হাজার কোটি টাকার কোম্পানির মালিক ইনি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: কার ভাগ্যে কি লেখা আছে তা কেউই জানেন না। জীবনের মোড় কখন ঘুরে কেউ সফলতার শীর্ষে পৌঁছে যাবেন তাও বলা অনিশ্চিত। তবে হ্যাঁ, প্রত্যেক সফলতার পেছনেই রয়েছে লড়াকু এক মানসিকতা! এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাধারণত বর্তমান বিশ্বে সমস্ত অভিভাবকই চান তাঁদের সন্তানরা ভালো ভাবে পড়াশোনা করে মস্ত চাকরি করুক।

এমনকি, তাঁরা এও মনে করেন যে, স্কুলে সফলতা না পেলে ছাত্রছাত্রীরা জীবনে কিছুই করতে পারবে না। তবে, তাঁদের সেই প্রথাগত ধারণাকেই ভুল বলে প্রমাণ করেছেন মুম্বাইয়ের এই ছেলেটি। পাশাপাশি, তিনি সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে নতুন এক দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা তৃষ্ণিত অরোরা’র প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি পড়াশোনা করতে একেবারেই পছন্দ করতেন না।

এদিকে, স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় তৃষ্ণিতের পরিবার তাঁকে নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিল। তবে, আজ সকলের সমস্ত চিন্তার অবসান ঘটিয়ে তিনি তৈরি করে নিয়েছেন তাঁর নিজের পরিচিতি। বর্তমানে তৃষ্ণিত সাইবার নিরাপত্তায় অত্যন্ত পারদর্শী হয়ে উঠেছেন।

উল্লেখ্য যে, ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের প্রতি অসম্ভব ঝোঁক ছিল তাঁর। পাশাপাশি, প্রায় সর্বক্ষণই তিনি তাঁর কম্পিউটারে ভিডিও গেম খেলতেন। অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়ে যায় যে, তাঁর বাবা আর কোনো উপায় না পেয়েই কম্পিউটারে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখতেন।

যদিও, এরপরেও থামানো যায়নি তৃষ্ণিতকে। বরং, তিনি কম্পিউটারে এতটাই দক্ষ ছিলেন যে, কম্পিউটারের পাসওয়ার্ডও হ্যাক করে গেম খেলা শুরু করে দিতেন। এমতাবস্থায়, তাঁর বাবা কম্পিউটারের প্রতি তৃষ্ণিতের টান এবং জ্ঞান দেখে বিষ্মিত হয়ে একটি নতুন কম্পিউটার নিয়ে আসেন। যাতে, তৃষ্ণিত আরও ভালো ভাবে দক্ষতা অর্জন করতে সচেষ্ট হন।

এদিকে, অত্যধিক কম্পিউটার চালানোর ফলে তৃষ্ণিত অষ্টম শ্রেণিতে ফেল করে যান। এই ঘটনায় কার্যত উপহাসের পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি। এমতাবস্থায়, তাঁর বাবা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন যে, তিনি কম্পিউটার নিয়েই এগোতে চান কি না!

এরপর মাত্র ১৯ বছর বয়সেই, তৃষ্ণিত কম্পিউটার ফিক্সিং এবং সফ্টওয়্যার ক্লিনিং করা শিখেছিলেন। ধীরে ধীরে ছোট ছোট প্রজেক্টেও কাজ শুরু করেন তিনি। একটা সময়ে তৃষ্ণিত বেশ পাকাপোক্ত হয়ে ওঠেন তাঁর কাজে। তাই, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি বড় লক্ষ্যের দিকে এগোতে শুরু করেন।

আজ তৃষ্ণিত একজন এথিক্যাল হ্যাকার। সাধারণত এথিক্যাল হ্যাকিং-এর মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক বা সিস্টেম ইনফ্রাস্ট্রাকচারের নিরাপত্তার মূল্যায়ন জড়িত থাকে। সার্টিফাইড হ্যাকাররা যাতে নেটওয়ার্ক বা সিস্টেমের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করার পাশাপাশি গোপন তথ্য চুরি করতে না পারে বা ভাইরাস ও অন্যান্য উপায়ে ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকেই নজর রাখেন এথিক্যাল হ্যাকাররা।

20200128123044 TACSecurityedited

এরপর মাত্র ২৩ বছর বয়সে, তৃষ্ণিত রিলায়েন্স, এসবিআই, অ্যাভন সাইকেলের মতো ভারতের বড় কোম্পানির ক্লায়েন্ট হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তাঁদের ভারতে ৪ টি অফিস রয়েছে এবং সম্প্রতি তাঁরা দুবাইতেও একটি অফিস খুলেছেন। এমনকি, আম্বানিরাও তাঁদের কাছ থেকে সাইবার পরিষেবা নিয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে তৃষ্ণিত জানিয়েছেন যে, “আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখনও আমি কম্পিউটার এবং এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলাম।” এখন তৃষ্ণিত TAC সিকিউরিটি সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স নামে একটি কোম্পানির মালিক। যার মূল্য বর্তমানে মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি, তিনি “Hacking Talk with Trishneet Arora”, “The Hacking Era” এবং “Hacking with Smart Phones”-এর মত বইও লিখেছেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর