বিয়ে করেছেন ৩০টি! ৩১তম বারে পুলিশের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পরার আগেই শ্রীঘরে গেলেন কনে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাজস্থানের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা দুঙ্গারপুর জেলার সাগওয়ারা থানার পুলিশ এমন এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে যিনি এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে কার্যত “বোকা” বানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছেন। এমতাবস্থায়, মধ্যপ্রদেশের  জব্বলপুর থেকে রীনা নামের ওই মহিলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে বিয়ের নাম করে ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেই উঠে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানেই রীনা মেনে নেন যে, এখনও পর্যন্ত ৩০টি বিয়ে করেছেন তিনি।

জানা গিয়েছে যে, তাঁর আসল নাম সীতা চৌধুরী। এই প্রসঙ্গে সাগওয়ারার এসএইচও সুরেন্দ্র সিং সোলাঙ্কি জানিয়েছেন যে, ২০২১ এর ১২ ডিসেম্বর যোধপুরের বাসিন্দা প্রকাশচন্দ্র ভাট একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। সেখানে ভাট জানান যে, ২০২১ সালের জুলাই মাসে এজেন্ট পরেশ জৈন তাঁকে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের বাসিন্দা রীনা ঠাকুরের সাথে বিয়ের ঠিক দেন। বিয়ের সময়ে রমেশ ও রীনা তাঁর কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন।

এদিকে, বিয়ের ৭ দিন পর্যন্ত শ্বশুরবাড়িতে থাকার পর তিনি রীনাকে জব্বলপুর নিয়ে চলে যান। ফেরার পথে রীনা অন্য লোকজনকে ডেকে তাঁকে মারধর করে সঙ্গীদের নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এরপরে পরেশ এবং রীনা তাঁদের ফোন নম্বর পরিবর্তন করে নেন এবং টাকারও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এসএইচও সুরেন্দ্র সিং আরও জানিয়েছেন যে, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে, ওই মহিলার আসল নাম সীতা চৌধুরী। তিনি জব্বলপুরে গুড্ডি ওরফে পূজা বর্মনের সঙ্গে কাজ করেন। পূজা এভাবেই বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে ঠকানোর একটি দল চালায়। এমনকি, জাল নাম সহ কিছু মহিলার ঠিকানা, আধার কার্ড এবং অন্যান্য কাগজপত্রও তৈরি করেছে সে। একাধিক রাজ্যে এজেন্টদের সাহায্যে ভুয়ো বিয়ের মাধ্যমে টাকা, সোনা, রূপার গয়না হাতিয়ে নেয় তারা।

পুলিশ কনস্টেবল বিয়ের জন্য তাঁর ছবি পাঠান:
তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ গুড্ডি ওরফে পূজা বর্মনের নম্বর খুঁজে পায়। এমতাবস্থায় কনস্টেবল ভানুপ্রতাপ তাঁর ছবি পাঠিয়ে বিয়ে করার জন্য পাত্রী খুঁজে দেওয়ার কথা বলেন পূজাকে। প্রথমে পাত্রী খুঁজে দেওয়ার জন্য তাঁর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়। তারপরই ওই কনস্টেবলকে ৮ থেকে ১০ জন মহিলার ছবিও পাঠানো হয়। আর তাতে রীনারও একটি ছবি ছিল। এমতাবস্থায়, রীনাকে চিনতে পেরে তাঁকেই বিয়ে করার কথা জানান ভানুপ্রতাপ।

ফিল্মি কায়দায় গ্রেফতার:
গুড্ডি এরপর তাঁদের সামদিয়া মলের কাছে অগ্রিম ৫০,০০০ টাকা নিয়ে আসতে বলেন। তারপরেই কনস্টেবল ভানুপ্রতাপ বর সেজে এবং কনস্টেবল ভূপেন্দ্র সিং ও বীরেন্দ্র সিং তাঁর বন্ধু সেজে যান। গুড্ডি রীনা ঠাকুরকে নিয়ে আসেন এবং সেখানে তাঁকে কাজল চৌধুরী হিসেবে পরিচয় দেন। এমতাবস্থায়, ভানুপ্রতাপদের ইশারা পেতেই সেখানে মহিলা পুলিশের একটি দল দল পৌঁছে যায়। তারপরেই গ্রেফতার করা হয় ওই দু’জনকে।

জানা গিয়েছে যে, রীনা ওরফে সীতা ওরফে কাজল তাঁর পরিবার ছেড়ে জব্বলপুরে থাকেন। শখ পূরণের জন্য তিনি এই ডাকাত দলে যোগ দেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তাঁর সমস্ত বিয়ের কথা এবং টাকা ও গয়না লুঠ করে পালিয়ে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন। এমনকি, মধ্যপ্রদেশের নর্মদাপুরম এলাকায় রীনা ঠাকুর ওরফে সীতা চৌধুরীর বিরুদ্ধে একইভাবে বিয়ে করে টাকা ও গয়না নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার একটি অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি, ওই মামলায় তাঁকে জেলেও থাকতে হয়।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর