বাংলা হান্ট ডেস্ক: বাঙালি কোন কিছু পেল মানেই তর্ক বিতর্ক শুরু। চায়ের আড্ডা হোক কিংবা ব্যস্ত ট্রেনের ভিড়, রাজনীতি থেকে বিনোদন সব নিয়েই চলে তুমুল বাকযুদ্ধ। আর এই বাকযুদ্ধের মধ্যে অন্যতম বিষয় হচ্ছে বরানগর (Baranagar)। বাঙালিদের প্রশ্ন হচ্ছে বরানগর নাকি বরাহনগর? এই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। আবার কেউ কেউ বলে দুটি নাকি আলাদা জায়গা। সত্যিই কি তাই! এদিকে বরাহনগর রেল স্টেশনে গেলে প্রশ্ন যেনো আরও চেপে বসে। কারণ স্টেশনে বড় বড় করে লেখা থাকে “Baranagar”, যার বাংলা অনুকরণ করলে দাঁড়ায় বরানগর। তার জন্যই মানুষের মধ্যে এত বিতর্ক! তবে আজকের প্রতিবেদনে জানাবো এই জায়গার আসল নাম কি।
বরাহনগরের (Baranagar) আসল নাম কিঃ
কলকাতার উত্তর সীমান্তে অবস্থিত এই শহরটি। বলা হয়, একসময় এই অঞ্চলে ডাচ কুটি স্থাপন করা হয়েছিল। এমনকি এই অঞ্চলের অবস্থিত রানী রাসমনির প্রসিদ্ধ দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির। অর্থাৎ বাঙালিদের তীর্থস্থানের অন্যতম জায়গা এটি। আর এত বিখ্যাত জায়গার নাম নিয়ে সমস্যা থাকলে চর্চা তো হবেই। তবে এর পিছনে রয়েছে বিরাট ইতিহাস। প্রাচীন ইতিহাস বলছে, এখানে নাকি “বরাহ” নামের মুনী থাকতেন। আর সেই মুনীর নামানুসারে জায়গার নাম হয় বরাহনগর (Baranagar)।
“বরাহ” মুনীর আসল পরিচয়: বরাহনগরে যে বরাহ মুনী থাকতেন, তিনি নাকি আর কেউ নন বিক্রমাদিত্যের সভায় নবরত্নের এক অন্যতম রত্ন। যার নাম হচ্ছে “বরাহমিহির।” ইতিহাসের পাতায় বর্ণিত রয়েছে এই মুনীর নাম। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই জায়গার নাম বরাহনগর হওয়াই উচিত (Baranagar)। এছাড়াও রয়েছে আরও একটি অন্যতম কাহিনী।
প্রচলিত কথা অনুযায়ী, বহু বছর আগে নাকি বরাহনগর (Baranagar) জঙ্গলে ঘেরা একটা জায়গা ছিল। আর সেই সময় এই অঞ্চলে প্রচুর প্রচুর ময়ূর পাওয়া যেত। যার ফলে সেখানে শুরু হয়, ময়ূরের পালক বিক্রির ব্যবসা। সেসময় নাকি ময়ূরের লেজকে “বরহা” নামে আখ্যায়িত করা হতো। বিশিষ্ট সূত্র মারফত জানা যায়, এই বরহা নাম থেকেই নাকি বরাহনগর শহরের উৎপত্তি।
আরও পড়ুনঃ শাশুড়ির হাত ধরতে এগিয়ে গেলেন আলিয়া, তারপরেই যা ঘটল… বিশ্বাস করতে পারছেন না নেটিজেনরা!
শুয়োর থেকে বরাহনগরের নামকরণ: আবার কেউ বলে, ঔপনিবেশিক যুগে এখানে নাকি বিশাল কসাইখানা ছিল। আর সেই সময় বছরে প্রায় ৩০০০ শুয়োর জবাই করা হত। আসলে শুয়োরের অপর নাম বরাহ। তাই কেউ কেউ বলেন, এখানে এত শুয়োর ছিল যে তার জন্য বরাহনগর (Baranagar) নামকরণ করা হয়। তবে শুয়োর বা বরাহ থেকেই যে এই জায়গার নামকরণ হয়েছে এই নিয়ে সঠিক কোন ব্যাখ্যা নেই, সমস্তটাই প্রচলিত কথা।
আরও পড়ুনঃ মার্কশিট দেওয়ার টাকাটুকুও নেই! রাজ্যের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ প্রাইমারির শিক্ষকদের
এছাড়াও রয়েছে আরেকটি বিশেষ প্রচলিত গল্প। বরানগর অবস্থিত হুগলি নদীর তীরে। লোকমুখে শোনা যায়, কয়েকশো বছর আগে এই নদীপথে নাকি বাণিজ্য হতো। যদিও সেই সময় পানিহাটিই ছিল বড় নৌ বন্দর। আর সেখানেই নাকি হলুদ ব্যবসায়ীরা হলুদ জমা করতো। যেখানে চলতো দেদার হলুদের ব্যবসা। আসলে হলুদকে বলা হয় “বরা”, আর সেই থেকেই নাকি নাম বরানগর (Baranagar) হয়েছে। সবটাই প্রচলিত কথা, এই নিয়ে সঠিক কোন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।