দুই বিচারপতির সংঘাত তুঙ্গে! জানেন কে এই জাস্টিস সৌমেন সেন?‌ আসল তথ্য জানলে মাথা ঘুরে যাবে

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যে মেডিকেলে ভর্তি (MBBS Admision Scam) মামলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির সংঘাত তুঙ্গে। এমবিবিএসে ভর্তিতে দুর্নীতির মামলা ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। রাজ্য পুলিশের ওপর ‘ভরসা’ না থাকায় এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay)। এরপর সেই নির্দেশের বিরোধিতা করে বিচারপতি সৌমেন সেনের (Justice Soumen Sen) ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের ওপর মৌখিক স্থগিতাদেশ জারি করে ডিভিশন বেঞ্চ। রায়ের কপি না দেখেই তিনি স্থগিতাদেশ জারি করা হল! এই নিয়েই বেনজির সংঘাতে জড়িয়ে যান দুই বিচারপতি।

মামলা থেকে শুরু হয়ে যায় ব্যক্তিগত আক্রমণ। সংঘাতের জল এতটাই গড়ায় যে তা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নেয় সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল শনিবার এই নিয়ে শুনানি ছিল সর্বোচ্চ আদালতে। আপাতত বিচারপতি সেন বনাম বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ইস্যুতে দু’তরফেরই বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।প্রসঙ্গত, বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে বর্তমানে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম শোনেন নি, এমন মানুষের সংখ্যাটা হয়তো খুবই কম। একাধিক উল্লেখযোগ্য নির্দেশ দিয়ে মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের কাছে তিনি ভগবানে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে তার সংঘাত অতীতে ছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একাধিক নির্দেশের সমালোচিত হয়েছে। নির্দেশ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছিল। অনেক নামী আইনজীবীও তার নির্দেশের সমালোচনা করেন। আর এবার আগের সমস্ত বিতর্ককে টপকে নিজেরই সহকর্মীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাতে জড়ালেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। নজিরবিহীন এই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল রাজ্যে। তবে এরই মধ্যে বিচারপতি সেনকে নিয়ে নতুন করে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।

বিচারপতি সেন সম্পর্কে কলকাতা হাইকোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যে তথ্য আছে তা নিম্নে তুলে ধরা হল: প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৫ সালের ২৭ জুলাই কলকাতায় জন্ম বিচারপতি সৌমেন সেনের। কলকাতার সেন্ট লরেন্স হাইস্কুল থেকে স্কুলিং শেষ করেন তিনি। এরপর ১৯৯০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন বিচারপতি। জানা গিয়েছে, কলেজে প্রথম স্থান অধিকার করেন বিচারপতি সৌমেন সেন। ১৯৯১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের আওতায় অ্যাডভোকেট হিসেবে তার নাম নথিভুক্ত হয়। আরবিআই, সেবি, এসআইডিবিআই সহ একাধিক বড় বড় মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জাস্টিস সেন। এরপর ২০১১ সালের ১৩ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।

justice ganguly justice sen

আরও পড়ুন: ভোটের আগেই সরকারি কর্মীদের পোয়া বারো! বকেয়া DA নিয়ে চিঠি গেল অর্থমন্ত্রকে, বড় আপডেট

উল্লেখ্য, রাজ্যে মেডিকেলে ভর্তি মামলা নিয়ে বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়! বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজের নির্দেশনামায় লিখেছিলেন, বড়দিনের ছুটির আগে শেষ যে দিন আদালতের কাজ হয়, সেদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে হাইকোর্টে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়ে বিচারপতি সেন বিচারপতি সিনহাকে কিছুটা রাজনৈতিক নেতার মতো নির্দেশ দিয়ে বলেন, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যত রয়েছে। তাই তাকে বিরক্ত করা চলবে না না।

এখানেই শেষ নয়, বিচারপতি সিনহার বেঞ্চের লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করার পাশাপাশি তার বেঞ্চে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যে ২টি মামলা রয়েছে তা খারিজ করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এও জানান যে বিচারপতি সিনহাই তাকে এই বিষয়ে সবটা জানিয়েছেন। বিচারপতি সেন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বলেও এদিন মন্তব্য করেন বিচারপতি গাঙ্গুলি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেনকে বিচারপতির পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর