পিঠে-পুলি, পায়েস থেকে রসগোল্লা-চাটনি, মিড-ডে মিলে ১৫ ধরনের খাবার, মেনু দেখলে চমকে যাবেন

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বাংলার ঐতিহ্য সংস্কৃতি সমাদৃত গোটা বিশ্বে। বিশেষ করে কৃষিপ্রধান বাংলার অতি পরিচিত এক উৎসব ‘নবান্ন’ যদিও সময়ের সাথে সাথেই বাংলার অনেক পালা পার্বণ আজ বিলুপ্তপ্রায়। তাই এবার সেসবের সাথে নতুন প্রজন্মকে একেবারে গোড়া থেকে পরিচয় করাতেই  মিড-ডে মিলে (Mid Day Meal)-এর মাধ্যমে এক বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের জয়রামপুর ত্রিপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

মিড-ডে মিলের (Mid Day Meal) পুরনো বাঙালিয়ানা

প্রতিনিয়ত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের দ্বারা উপকৃত হয়ে চলেছেন রাজ্যের বিভিন্ন বয়সের মানুষজন। যার মধ্যে অন্যতম মিড ডে মিল। কিন্তু ইতিপূর্বে একাধিকবার এই মিড ডে মিলের (Mid Day Meal) খাবার নিয়ে উঠেছে ভুরি ভুরি অভিযোগ। অতি নিম্নমানের খাবার থেকে শুরু করে, খাবারের মধ্যে টিকটিকি, ইঁদুর, আরশোলা কিংবা সাপ ইত্যাদি পড়ার খবরে উঠে এসেছে শিরোনামে।

এসবের মধ্যেই এবার খাবারের মেনুতে বিশেষ চমক দিল পূর্ব বর্ধমানের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাঙালির অন্যতম হারিয়ে যাওয়া পার্বণ হল, নবান্ন। এবার এই নবান্নের সাথেই পড়ুয়াদের পরিচয় করিয়ে দিতে এবার মিড ডে মিলের (Mid Day Meal) সাহায্য নিয়েছিলেন এই স্কুলের শিক্ষকরা। স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিলুপ্তপ্রায় এই নবান্ন উৎসবের সামিল হয়ে পড়ুয়াদেরও মন এবং পেট দুই’ই ভরে গিয়েছে।

কি কি ছিল খাবারের মেনুতে?

নবান্ন (Nabanna) উদযাপনের দিন বলে কথা! তাই খাবারের মেনুতেও ধরা পরল সেই ছবি। রোজকার ভাত ডাল তরকারি বা ডিমের বদলে নবান্ন উদযাপনে সবার খাবার পাতে ছিল নলেন গুড়, সুগন্ধি চালের পায়েস, পিঠে-পুলি সহ ছিল জিভে জল আনা ১৫ রকমের পদ। সাথে ছিল বিভিন্ন ফল মেশানো সুস্বাদু চাল মাখা, পিঠে, পায়েস, কলাই ডালের বড়া, ভাত,ফুলকপির তরকারি, পনির ও নানা রকমের ভাজা। আর শেষ পাতে ছিল চাটনি ও রসগোল্লা।

শুধু তাই নয়, নবান্নের  এই এলাহী খাওয়া-দাওয়াও পাশাপাশি এক্ষেত্রে বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিল বিদ্যালয়ের পরিদর্শক ও প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে গ্রাম বাংলার নবান্ন পার্বণের তাৎপর্যের গল্প শোনা। একসময় পশ্চিমবঙ্গের শস্যগোলা হিসেবে পরিচিত ছিল পূর্ব বর্ধমান জেলা। এই কৃষি নির্ভর জেলার অন্যতম প্রধান পার্বণ ছিল নবান্ন। ধানের ক্ষেত থেকে আমন ধান তোলার পর তা থেকে তৈরি অন্ন প্রথমে দেব-দেবীকে নিবেদন করার নিয়ম প্রচলিত ছিল।

আরও পড়ুন: ‘সরকারি ভাতা নিলে..,’ স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে এবার কড়া সিদ্ধান্ত রাজ্যের

সেই থেকেই এই জেলার কৃষিপরিবার গুলির মধ্যে এই নবান্ন পার্বণের চল রয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির আগমনে এখন নবান্ন পার্বণ প্রায় বিলুপ্ত প্রায়। তবে বাংলা এবং বাংলার ইতিহাসের সাথে নতুন প্রজন্মের পরিচয় করাতে মুর্শিদাবাদের স্কুলের এই অভিনব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ দিন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই আয়োজন প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, তাদের স্কুলে এমন অনেক পড়ুয়া রয়েছেন যারা খুবই গরীব পরিবার থেকে এসেছেন।

Nabanna

তাই অভাবের কারণে তাদের অনেকের পক্ষেই নবান্নের আয়োজন করা সম্ভব নয়। ঐ সমস্ত পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখেই এবার বিদ্যালয়ের তরফে মিড ডে মিলের (Mid Day Meal) সাহায্যে পড়ুয়াদের নবান্ন উৎসবের সাথে পরিচয় করানো হল। একই সাথে স্কুলের পরিদর্শক জানিয়েছেন নবান্ন পার্বণের সাথে পড়ুয়াদের  পরিচয় করানোর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর