প্রয়াত বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী পিলু ভট্টাচার্য, স্মৃতিচারণা শোকস্তব্ধ রূপম ইসলামের

বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলা গানের জগতে আবারো নক্ষত্র পতন। না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী পিলু ভট্টাচার্য (pilu bhattacharya)। বৃহস্পতিবার রাতে প্রয়াত হন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিল্পী। তাঁর ছেলে ঋতর্ষি ভট্টাচার্য শোকজ্ঞাপন করে বাবার মৃত‍্যুর খবর জানিয়েছেন নেটমাধ‍্যমে। শোকের পরিবেশ গোটা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে।

জানা যাচ্ছে, গত কয়েকদিন ধরে বুকের ব‍্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন শিল্পী। গত ১৭ অগাস্ট গিয়েছিলেন হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার রাতে ফের বুকের ব‍্যথা শুরু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ পাওয়া যায়নি। পথেই সব শেষ। পিলু ভট্টাচার্যের সোশ‍্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকেই ছেলে ঋতর্ষি বাবার মৃত‍্যুসংবাদ জানান। শিল্পীর অনুরাগীদের তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করার অনুরোধ করেন। শোকজ্ঞাপন করেছেন জোজো, ইমন চক্রবর্তীরা।

ei samay 1 1
দুঃসংবাদটা শুনে ভেঙে পড়েছেন সঙ্গীতশিল্পী রূপম ইসলাম। পিলু ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর বহু পুরনো।পরিচয়। একরাশ স্মৃতি এসে ভিড় করছে তাঁর মনে। রূপমের প্রথম গ্রুপ ‘ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠী’র অনুষ্ঠানের জন‍্য হোর্ডিং পাবলিসিটির ব‍্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তাঁর ‘পিলুদা’। রূপমের বাবাও বড় ভক্ত ছিলেন পিলু ভট্টাচার্যের গানের।
তিনি লিখেছেন, ‘বাবা খুব ভক্ত ছিলেন পিলুদার পারফর্মেন্সের। আমাকে শিখতে বলতেন— দ্যাখ কী করে পিলু ‘এক দঙ্গল ছেলে’ গেয়ে হলভর্তি মানুষকে নাচিয়ে দিল— তুই পারবি? শিশিরমঞ্চ থেকে অনুষ্ঠান দেখে এসে বাবা বলেছিলেন। একথা অবশ্য নয়ের দশকের।

তারপর পিলুদার সঙ্গে আমার নিজপরিচয়ে আলাপ হল। পিলুদা আমার বাবাকে যেমন শ্রদ্ধা করত, তেমনই স্নেহ করত আমায়। ‘দাদা না দিদি’ অনুষ্ঠানে আমার ক্যাপ্টেনসিতে ‘রকবাজ‘ টিমে তার অংশগ্রহণ আমাদের আরও কাছাকাছি এনে দেয়। যে কোনও টিমেরই মূল্যবান সম্পদ হতে পারত পিলুদা, আমাদের টিমের হয়ে লড়েও গোটা প্রতিযোগিতা মাতিয়ে রেখেছিল। আমরা কম্পিটিশন জিতিনি, কিন্তু মানুষের মন জয় করেছিলাম। পিলুদাও বেঁচে থাকবে আমার জীবনে ‘রকবাজ’ হয়েই। পিলুদা ফসিলস মঞ্চেও আমার সঙ্গে মঞ্চে থেকেছে। তার গানও আমি রেকর্ড করেছি। যখনই দেখা হয়েছে আমরা মজা করেছি। আমার কালো জামার সম্ভার দেখে পিলুদার সেই অমর উক্তি ‘রূপমের আলমারি খুললেই লোডশেডিং হয়ে যায়’— আমার মনের দেওয়ালে বরাবর টাঙানো থাকে। সে সব কিছু তো আছেই। কিন্তু তারপরেও থেকে যায় আসল সংহতির জায়গাটা— আমরা ‘রকবাজ’। আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্তগুলো আমরা কেউই ভুলিনি। তবুও পুরো ব্যাপারটাই এতদিন পরে আমাদের কাছে ‘মজা’ হয়ে গেছে।

পিলুদার চলে যাওয়ার খবরটবর ভুলে আমি জাস্ট লিখতে যাচ্ছিলাম— ‘পিলুদা, ঘাবড়াও মৎ— রকবাজদের রিইউনিয়ন হবেই, তোমাকে ফাটিয়ে পারফর্ম করতে হবে, তৈরি হও!’ —আমার ফোনে ঢুকে এল ‘রকবাজ’ টিমের আসল দাদা, ‘সব দাদার সেরা দাদা’ অরিন্দম গাঙ্গুলীর মেসেজ— ‘একজন রকবাজ চলে গেল রূপম, খুব খারাপ লাগছে!’ সব মনে পড়ে গেল। লোডশেডিং হয়ে গেল, আলমারিতে নয়, মনে। পিলুদা যে চলে গেছে না ফিরবার দেশে, কাল রাতে।’

কেরিয়ারের শুরুর দিকে তেমন সাফল‍্যের মুখ দেখেননি পিলু ভট্টাচার্য। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর গানের ভক্ত হয়ে উঠতে থাকেন সকলে। প্লেব‍্যাক সিঙ্গিংয়ের পাশাপাশি নিজেও গান লিখতে শুরু করেন তিনি। তাঁর ‘রাধামাধব’ অ্যালবামটি দারুন জনপ্রিয় হয়েছিল সঙ্গীতপ্রেমীদের মাঝে।

Avatar
Niranjana Nag

সম্পর্কিত খবর