এক সময় বিক্রি করতেন খবরের কাগজ, কোনোরকম কোচিং ছাড়ায় আজ IAS অফিসার নিরীশ রাজপুত

বাংলা হান্ট ডেস্ক: কোনো লক্ষ্য স্থির করে তা পূরণের জন্য আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করে হতে হয় অদম্য লড়াইয়ের সম্মুখীন। যদিও, সেই লড়াই প্রত্যেকের জন্য আবার সমান হয় না। বরং, দারিদ্রতার ভ্রূকুটি তা আরও কঠিন করে দেয়। যদিও, সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে যাঁরা তাঁদের লক্ষ্য পূরণ করে নেন তাঁরাই তৈরি করে ফেলেন এক অনন্য সাফল্যের কাহিনি (Success Story)।বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা ঠিক সেইরকমই একজন ব্যক্তির প্রসঙ্গ পাঠক দরবারে উপস্থাপিত করছি।

এমনিতেই, UPSC পরীক্ষাকে দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা হিসেবে মনে করা হয়। পাশাপাশি, এই পরীক্ষায় সাফল্য পেতে বছরের পর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ প্রার্থী প্রস্তুতি নিয়ে চলেছেন। যদিও, তাঁদের মধ্যে মাত্র কিছুজনই পাশ করতে পারেন এই পরীক্ষা। এমনকি, বারংবার পরীক্ষা দিয়েও কাঙ্খিত সফলতা পান না অনেকেই। এমতাবস্থায়, তীব্র দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে কোনো কোচিং ছাড়াই এই পরীক্ষা পাশ করেন মধ্যপ্রদেশে বসবাসকারী IAS অফিসার নিরীশ রাজপুত।

দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি: মধ্যপ্রদেশের একটি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নিরীশ। তাঁর বাবা দর্জির কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাতেন। পরবর্তীকালে নিরীশের বড় দুই দাদা অধ্যাপক হয়ে যান। যদিও, প্রথম থেকেই আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয় তাঁদের। কিন্তু, পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনো খামতি রাখেন নি তাঁরা।

বন্ধুর কাছ থেকে হন প্রতারিত: B.Sc এবং M.Sc উভয়ক্ষেত্রেই টপার ছিলেন তিনি। এমতাবস্থায়, পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় নিরীশের এক বন্ধু তাঁকে তাঁর নতুন কোচিং সেন্টারে UPSC-র প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন প্রার্থীদের পড়ানোর কথা বলেন। তার পরিবর্তে নিরীশকে স্টাডি মেটিরিয়াল দেওয়া হবে বলেও জানান ওই বন্ধু। এদিকে, নিরীশ প্রায় ২ বছর যাবৎ ওই প্রতিষ্ঠানে পড়ান। কিন্তু, তাঁর বন্ধু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন নি। এমনকি, তাঁকে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বেরও করে দেওয়া হয়।

প্রতারণা থেকে পান শিক্ষা: এদিকে, এই ঘটনার পর রীতিমতো অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় নিরীশের। এমনকি, তখন তিনি খবরের কাগজ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেই কাজও করেন। পাশাপাশি, ওই বন্ধুর কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে মানসিক আঘাতও পান তিনি। যদিও, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দিল্লি চলে যান নিরীশ। সেখানে এক বন্ধুর কাছ থেকে নোট ধার নিয়ে নিজে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।

WhatsApp Image 2022 08 25 at 2.38.24 PM

যদিও, দিল্লিতে আসার পর নিরীশ আরও অর্থ সঙ্কটে ভুগতে থাকেন। এমতাবস্থায়, পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি পার্ট টাইম চাকরি করতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, তিনি কোনো কোচিং ছাড়াই UPSC পরীক্ষার জন্য পড়া চালিয়ে যান। আর এভাবেই দৈনিক প্রায় ১৮ ঘন্টা পড়াশোনা করে তিনি প্রথম তিনটি প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলেও চতুর্থবারে কোনো কোচিং ছাড়াই পরীক্ষায় সর্বভারতীয় স্তরে ৩৭০ তম স্থান অর্জন করেন। এই প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারের সময়, নিরীশ জানিয়েছিলেন যে, UPSC-র জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আগে, তিনি শুধু এটুকু বুঝতেন যে, IAS হওয়ার পরে তাঁর জীবন বদলে যেতে পারে। আর তা হাসিল করেও দেখিয়েছেন তিনি।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর