কয়েক লক্ষ কোটির মালিক! চিনে নিন হায়দ্রাবাদের সেই নবাবকে, যার কাছে আম্বানি-আদানিও নস্যি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের প্রসঙ্গ উঠলেই সবার আগে মুকেশ আম্বানি-গৌতম আদানির মত ধনকুবেরদের নামই মাথায় আসে। এই বিজনেস টাইকুনদের সম্পত্তি ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কিন্তু, একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকালে বোঝা যাবে যে ভারতে এমন কিছু জন মানুষ ছিলেন যাঁদের সম্পত্তির পরিমানের হিসেব শুনলে চমকে যাবেন আম্বানি-আদানিরাও। অর্থাৎ, এই ধনকুবেররাও সম্পত্তির বিচারে স্থান পাবেননা তাঁদের কাছে। সেইরকমই একজন হলেন মীর ওসমান আলী খান।

১৯১১ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত হায়দ্রাবাদ শাসন করেন তিনি:
স্বাধীনতার আগে ভারতে প্রায় ৫৬৫ টি ছোট-বড় রাজ্য ছিল। এই সমস্ত রাজ্যের মধ্যে হায়দ্রাবাদ ছিল একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ রাজ্য এবং এই রাজ্যের শেষ নবাব ছিলেন নিজাম ওসমান আলী খান। তিনি ১৯১১ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৭ বছর হায়দ্রাবাদ শাসন করেছিলেন।

হায়দ্রাবাদের এই নিজামকেই বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হত। যদিও, ঐতিহাসিকদের মতে, চতুর্দশ শতকের আফ্রিকান রাজা মানসা মুসাই ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাজা। তবে, তাঁকেও পাল্লা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল ওসমান আলী খানের।

নবাবের মোট সম্পদ ছিল ২৩৬ বিলিয়ন ডলার:
১৯১১ সালে, ওসমান আলী খান হায়দ্রাবাদের নিজাম হিসাবে তাঁর পিতার স্থলাভিষিক্ত হন এবং প্রায় ৪ দশক ধরে এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, ওসমান আলী খানের মোট সম্পদের পরিমাণ ২৩৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ছিল। অর্থাৎ তাঁর মোট সম্পদ বর্তমানে ইলন মাস্কের প্রায় সমতুল্য ছিল।

ভারত সরকারকে দান করা হয় ৫ হাজার কেজি সোনা:
১৯৬৫ সালে যখন ভারত চিনের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তখন ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী দেশের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলেন। ওসমান আলী খানও দেরি না করে ভারত সরকারকে ৫ হাজার কেজি সোনা দান করেন। তবে, তিনি এতটাই কৃপণ ছিলেন যে, দিল্লিতে সোনা পাঠানোর সময় তিনি জানান, “আমরা কেবল সোনা দান করছি, তাই এই লোহার বাক্সগুলি হায়দ্রাবাদে ফেরত পাঠানো উচিত।”

৫০ টি Rolls Royce-এর মালিক:
মীর ওসমান আলী খান ৫০ টি বিলাসবহুল Rolls Royce গাড়ির মালিক ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কথিত আছে যে, যখন Rolls Royce মোটরকারস লিমিটেড মীর ওসমানের কাছে তাদের গাড়ি বিক্রি করতে অস্বীকার করেছিল, তখন হায়দ্রাবাদের শাসক কিছু পুরনো Rolls Royce গাড়ি কিনে সেগুলিকে আবর্জনা ফেলার জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন। যা সংস্থার কাছে একটা বিরাট ধাক্কা ছিল।

৩৫ বছর ধরে একই তুর্কি টুপি পরতেন:
বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য করা হলেও নিজাম ছিলেন অত্যন্ত কৃপণ। তিনি প্রায়ই নোংরা কাপড় এবং ছেঁড়া জুতো পরতেন। এমনকি, মীর ওসমান আলী খান এতটাই কৃপণ ছিলেন যে, তিনি কখনও তাঁর কাপড় ইস্ত্রি করেননি। শোনা যায় যে, তিনি ৩৫ বছর ধরে একটাই টুপি পরেছিলেন। এটির সেলাই খুলে গেলেও ব্যবহার করা থামাননি তিনি।

অর্থাৎ কল্পনা করুন, যে ব্যক্তি ৫,০০০ কেজি সোনা দান করতে পারেন, তাঁর জীবনযাপন কতটা রাজকীয় হওয়া উচিত। কিন্তু হায়দ্রাবাদের নিজাম ছিলেন সম্পূর্ণ উল্টো, তিনি চাটাইয়ে বসে টিনের থালায় খাবার খেতেন। শুধু তাই নয়, তিনি সবচেয়ে সস্তা সিগারেটের মাধ্যমে ধূমপান করার পাশাপাশি কখনও সিগারেটের বাক্সও নিতেন না।

পেপারওয়েট হিসাবে ১৩৪০ কোটি টাকার হিরে ব্যবহার করতেন:
কথিত আছে, ওসমান আলী খানের শয়নকক্ষ বছরে একবারই পরিষ্কার করা হত। এমনকি, সেখানে অঢেল সম্পদ রীতিমত মাটিতেই পড়ে থাকত। তিনি ২০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১,৩৪০ কোটি টাকার হিরেকে কাগজে মুড়ে পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহার করতেন। এছাড়াও, সে সময় তাঁর কাছে ২ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি নগদ অর্থ ছিল, যা তিনি সংবাদপত্রে মুড়ে রেখেছিলেন। কিন্তু প্রতি বছরই কিছু পরিমান টাকা ইঁদুর খেয়ে ফেলত।

Usman Ali Khan

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হায়দ্রাবাদের শেষ শাসক হয়ত কৃপণ ছিলেন কিন্তু তিনি উদারও ছিলেন অনেক। এই প্রসঙ্গে কথিত আছে, ওসমান আলী খান একবার তাঁর চাকরকে বাজার থেকে ২৫ টাকা মূল্যের একটি কম্বল আনতে বলেছিলেন। চাকরটি সারা বাজারে খোঁজাখুঁজি করেও ২৫ টাকার কম্বল পাননি। যার ফলে তিনি খালি হাতে ফিরে এসে নিজামকে বললেন, বাজারে ৩৫ টাকার কম দামের কম্বল নেই। নিজাম চাকরের কথা শুনে পুরনো কম্বল দিয়েই শীত কাটাবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি BHU-এর জন্য ১ লক্ষ টাকা দান করেছিলেন। মীর ওসমান আলী খান ১৯৬৭ সালে ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর