জল বিক্রি শুনে হাসাহাসি করত সকলে, সেখান থেকেই আজ ১৫০০ কোটির কোম্পানি Bisleri

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ‘প্যাকেজড ওয়াটার’ এবং ‘বিসলেরি’-র নাম আজ প্রায় সমার্থক ভাবে ব্যবহৃত হয় গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত জল বিক্রি যে একটা ব্যবসা হয়ে উঠতে পারে এমনটা বিশ্বাস করাই ছিল কষ্টকর। টিউবওয়েল, নালা, নদী, পুকুরে এত জল থাকতে কেউ জল কিনে খেতে হবে কেন? এই প্রশ্ন তুলেই হাসাহাসি করতেন সকলে। কিন্তু চরম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মধ্যেও নিজের জেদ ছাড়েননি একটি মানুষ। তারই সাফল্যের গল্প আজ সংক্ষেপে আপনাদের শোনাবো।

‘বিসলেরি’ কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফেলিস বিসলেরি। ১৯২১ সালে ফেলিস বিসলেরি মারা গেলে এই কোম্পানি দেখাশোনার ভার পান তারই পরিবারের ডা: রোজিজ। তবে তখন এটি মোটেই কোন বিশুদ্ধ জল বোতলে ভরে বিক্রি করার কোম্পানি ছিলনা, বরং এটি ছিল একটি ওষুধের কোম্পানি। যার একটি শাখা ছিল ভারতেও। সেসময় ডক্টর রোজিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ভারতীয় খুসরু সন্তুক। মূলত তিনি ছিলেন বিসলেরির আইনি উপদেষ্টা।

১৯৬৫ সাল নাগাদ ডঃ রোজিজ জানান তিনি ভারতেও একটি প্ল্যান্ট খুলতে চান। এ ব্যাপারে সম্মত হন খুসরু। প্রায় নিজের দায়িত্বে মুম্বাইয়ের থানেতে ভারতের প্রথম বিসলেরি প্ল্যান্ট স্থাপন করেন তিনি। যদিও ভারতে তখন ‘প্যাকেজড ওয়াটার’ এভাবে বিক্রি করার বিষয় প্রায় সকলেই অজ্ঞ ছিলেন। বাজারও তেমন বেশি কিছু ছিল না। তার ওপর আবার বিসলেরির একটি জলের বোতলের দাম ছিল এক টাকা, যা সে সময় ছিল যথেষ্ট বেশি। তাই শুধুমাত্র বড় বড় রেস্তোরাঁ এবং হোটেল ছাড়া অন্য কোথাও তেমন বাজার পায়নি বিসলেরি। যার ফলে তারা জলের সাথে সোডা ওয়াটারও বিক্রি করতে শুরু করেন। জলের তুলনায় সোডা ওয়াটারেরই চাহিদা ছিল অনেক বেশি।

ফলে তেমন লাভ করতে পারছিল না বিসলেরি, এরপর খুসরুর কাছে এই কোম্পানি কিনে নেন চৌহান ব্রাদার্স। ভাবলে অবাক হবেন তখন মাত্র ৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়ে যায় এই গোটা কোম্পানিটি। তখন সারা দেশজুড়ে মাত্র পাঁচটি প্ল্যান্ট ছিল বিসলেরির। তার মধ্যে চারটি মুম্বাইতে এবং একটি কলকাতায়। এরপর থেকেই কার্যত বিসলেরির উত্থান শুরু। ১৯৭০ সালে কম্পানি কেনার পর সোডা ওয়াটারের সাথে সাথে বেশকিছু জায়গা বাছতে শুরু করে চৌহান ব্রাদার্স, যেখানে অশুদ্ধ জলের কারণে বিশুদ্ধ জলের চাহিদা তৈরি হতে পারে। সেই সূত্র ধরেই রেলওয়ে স্টেশন, হাসপাতাল, বাস স্ট্যান্ড প্রভৃতির সামনে তৈরি করা হয় বিসলেরির আউটলেট।

IMG 20211008 121345

পরবর্তী ৩০ বছর কার্যত বাজারে একচ্ছত্র রাজ করেছিল বিসলেরি। এরপর প্রতিদ্বন্দিতায় আসে বেইলি, অ্যাকুয়াফিনা এবং কিনলে সহ আরও একাধিক ব্র‍্যান্ড। তবে বিসলেরির জনপ্রিয়তার কাছে পৌঁছাতে এবং তাদের টক্কর দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় বাকি কোম্পানিগুলিকে। বিসলেরিও নিজের মার্কেটিং স্ট্রাটেজিতে একাধিক পরিবর্তন এনেছে এখন। আজ গোটা ভারতে তাদের প্রায় একশো পঁয়ত্রিশটি প্ল্যান্ট রয়েছে। প্রতিদিন ২ কোটি লিটারেরও বেশি জল বিক্রি করে বিসলেরি। রয়েছে প্রায় ৫০০০ ডিস্ট্রিবিউটর, বর্তমানে এর মালিক রমেশ চৌহান।

 

Avatar
Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর