প্রবল বন্যাতেও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ভোলেনাথের মন্দির! চমকে দেবে হিমাচলের এই “কেদারনাথ”-এর কাহিনী

বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমরা সবাই জানি যে, হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) আবহাওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। পাশাপাশি, হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলি এই পার্বত্য অঞ্চলে কখনও কখনও বড় বিপর্যয় ডেকে আনে। যার ফলে ঘটে যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও। সম্প্রতি হিমাচল প্রদেশের কুল্লু, মানালি, মান্ডির মতো এলাকাগুলিও এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এমতাবস্থায় প্রকৃতির বিপর্যয়ের আবহে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে ভগবান ভোলেনাথের মন্দির। যে মন্দিরটিকে নদীর তীব্র স্রোতকে উপেক্ষা করেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত ভিডিও ভাইরালও হয়ে গিয়েছে।

মূলত, মান্ডির ওই অত্যন্ত পুরোনো পঞ্চভকত্র মন্দির ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বিয়াস নদীর প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ঢেউয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। এদিকে, স্থানীয় মানুষ বিশ্বাস করে যে, পাঁচ শতাব্দীরও বেশি পুরোনো এই শিব মন্দিরটি হিমাচল প্রদেশকে রক্ষা করেছে। এই মন্দিরটি দেখতে অবিকল কেদারনাথ মন্দিরের মতো।

প্রবল বৃষ্টির মাঝেই দাঁড়িয়ে ছিল মন্দির: চলতি বছরে হিমাচল প্রদেশে এই ধ্বংসযজ্ঞের পরে মান্ডির এই মন্দিরের চারপাশে যা কিছু ঘটেছে, তা বছরের পর বছর ধরে সবার মনে থাকবে। পঞ্চভকত্র মন্দির মানে মহাদেবের সেই মূর্তি যার পাঁচটি মুখ রয়েছে। পঞ্চমুখী মহাদেবের এই মন্দিরের চারপাশে ধ্বংসের চিহ্ন এখনও দৃশ্যমান। এই মন্দিরের সঙ্গে মান্ডি শহরের সংযোগকারী পুরোনো লোহার সেতুটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেতুটি ভেসে যাওয়ার পর ভক্তদের মন্দিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র পথ শহরের মাঝখানে থাকলেও বর্তমানে বিপদের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষকে মন্দিরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

এই প্রসঙ্গে স্থানীয় পুরোহিত নবীন কৌশিক জানিয়েছেন যে, যদিও এই মন্দিরটি ষোড়শ শতকে নির্মিত হয়েছিল, তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে মন্দিরটি পাণ্ডবরা নিজেরাই তৈরি করেছিলেন। পাশাপাশি, পাণ্ডবরা নিজেরাই এখানে পুজো করতেন। এমতাবস্থায়, মন্দিরের পূর্ব এবং উত্তর দিকের গেটগুলি জলস্রোতের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও শক্তিশালী বিয়াস নদীও শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি।

মন্দিরের কতটা ক্ষতি হয়েছে: মূলত, গত পরশু ছিল শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার ছিল। যার ফলে ভক্তরা এই মন্দিরে ভিড় করেছিলেন। কিন্তু গত রবিবার থেকেই আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করে গোটা হিমাচল প্রদেশে। এদিকে, মন্দিরের প্রবেশপথে বাবা ভৈরব নাথের একটি মন্দির রয়েছে। যাকে এই মন্দিরের রক্ষক বলে মনে করা হয়। কিন্তু, ওই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ভৈরবের মন্দির বালিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, মহাদেবের যে ধামের জন্য মান্ডিকে “ছোট কাশী” বলা হয়, মহাদেবের সেই মূল ফটকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলত, হিমালয় থেকে বেরিয়ে আসা বিয়াস নদীর স্রোত দরজার ক্ষতি করেছে। এই মন্দিরের প্রবেশদ্বারের ভিতরের ছবিগুলি অত্যন্ত আশ্চর্যজনক। ভেতরের ছবিগুলিকেও দেখতে হুবহু কেদারনাথ মন্দিরের মতো। তবে, প্রদক্ষিণের জন্য থাকা মন্দিরের প্রাঙ্গণটি বর্তমানে জলমগ্ন হয়েছে।

The temple of Bholenath is standing even in heavy floods

“মহাদেব হিমাচল রক্ষা করেছেন”: এই প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে যে, প্রশাসনের সহযোগিতায় খুব দ্রুত এই মন্দিরের  পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হবে। কিন্তু বর্তমানে মহাদেবের মূর্তি বালির আস্তরণে আবৃত থাকায় তাঁকে দর্শন করা এখনও মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঐতিহাসিক প্রাচীন শিব মন্দিরটি মানুষের বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে। সেই কারণেই স্থানীয় জনগণ বিশ্বাস করে যে এত বড় ধ্বংসযজ্ঞের পরেও তাঁদের শহর এবং তাঁদের অঞ্চল বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে কেবলমাত্র মহাদেবের কৃপায়। মান্ডির বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন যে মহাদেবের এই “ছোট কাশী”-র প্রভাব প্রকৃতির প্রকোপ থেকে হিমাচলকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর