ভারতের এমন একটি অদ্ভুত গ্রাম, যেখানে হোলির দিন হয় পাথরের বৃষ্টি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের দেশ হোলি এমনই একটি উৎসব যেখানে মেতে ওঠেন আট থেকে আশি সকলেই। পাশাপাশি, রঙের এই উৎসবে ঘুঁচে যায় সমস্ত দূরত্বও। সমগ্র ভারতজুড়েই এই উৎসব মহা সমারোহে পালিত হয়। তবে, কোনো কোনো জায়গায় হোলি উপলক্ষ্যে এমন কিছু রীতি প্রচলিত রয়েছে যা কার্যত বিশ্বাস করাই কঠিন হয়ে পড়ে। বর্তমান প্রতিবেদনে সেই রকমই একটি প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করা হল।

ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগা জেলার বারি চাতকপুর গ্রামে এক্কেবারে অনন্যভাবে হোলি উদযাপন করা হয়। এখানে হোলির দিনে অনেকেই মাঠে পুঁতে রাখা কাঠের খুঁটি উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেন এবং সেই সময় সেখানে জড়ো হওয়া ভিড় তাঁদের দিকে বড় ঢিল বা পাথর ছুঁড়তে থাকেন। সেই অবস্থাতেই যারা খুঁটি উপড়ে ফেলতে সফল হন তাঁদেরকে অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে মনে করা হয়।

এদিকে, খুঁটি উপড়ে ফেলা এবং পাথর ছুঁড়ে ফেলার এই ঐতিহ্যের পেছনে কোনো শত্রুতা থাকেনা। বরং কিছু মানুষ গতানুগতিক রীতিকেই এগিয়ে নিয়ে যান এর মাধ্যমে। এই প্রসঙ্গে লোহারদাগার প্রবীণ সাংবাদিক সঞ্জয় কুমার জানিয়েছেন যে, গত কয়েক বছরে লোহারদাগা ছাড়াও আশেপাশের জেলা থেকে বহু সংখ্যক মানুষ বারি চাতকপুরের এই হোলি দেখতে ভিড় জমান। তবে, শুধুমাত্র এই গ্রামের মানুষদেরই এতে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

জানা গিয়েছে যে, দীর্ঘ কয়েক’শ বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। তবে সুনির্দিষ্ট ভাবে ঠিক কবে থেকে এই ঐতিহ্য শুরু হয়েছে এবং এর পেছনে ঠিক কি কারণ রয়েছে কী তা কেউই জানেন না। প্রথা অনুযায়ী, হোলিকা দহনের দিন পূজার পর গ্রামের পুরোহিতরা মাটিতে খুঁটি পুঁতে দেন এবং পরের দিন গ্রামের বাসিন্দারা এটি উপড়ে ফেলার এবং পাথর নিক্ষেপের কাজে অংশ নিতে জড়ো হন।

তবে, এটা বিশ্বাস করা হয় যে, যারা পাথরে আঘাত পাওয়ার পরও ভয় ত্যাগ করে খুঁটি উপড়ে ফেলতে পারেন, তাঁরা সুখ ও সৌভাগ্য লাভ করেন। পাশাপাশি, ওই মানুষগুলিকে সত্যের পথের যাত্রী হিসেবে মনে করা হয়। এছাড়াও, গ্রামের মানুষরা জানিয়েছেন যে, আজ পর্যন্ত এই পাথর নিক্ষেপের হোলিতে কেউ গুরুতর ভাবে আহত হননি।

STONE
সবচেয়ে বড় কথা হল, এই অনুষ্ঠানে গ্রামের মুসলমানরাও অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি, এই খেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলা ছাড়াও একাধিক রাজ্য থেকে দর্শকরা এখানে উপস্থিত হন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর