এটাই হল পৃথিবীর সবচেয়ে দামি পদার্থ! এর এক গ্রামের জন্য খরচ করতে হবে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের বিশ্বে এমন অনেক জিনিস রয়েছে যেগুলির দাম থাকে অনেক উঁচুতে। এমনকি, সোনা, রুপো কিংবা হিরের মত জিনিস কিনতে গেলেও আমাদের অনেক ভাবনাচিন্তা করতে হয়। তবে, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা এমন একটি পদার্থের প্রসঙ্গ আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করব যেটি কেনা সাধারণ মানুষের পক্ষে রীতিমতো অসম্ভব। কারণ, সেটির ১ গ্রামের দামই কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। হ্যাঁ, শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা কিন্তু একদমই সত্যি! মূলত, আজ আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি পদার্থ অ্যান্টিম্যাটার (Antimatter) সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।

কয়েক বছর আগে, নাসা এই পদার্থের এক গ্রামের দাম বিবেচনা করেছিল প্রায় ৬২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪,৭৩,০৪,৬৮,৭৫,০০,০০,০০০ টাকা)। যা এখন বেড়ে ৯০ ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে। অর্থাৎ, বর্তমানে সারা বিশ্ব যদি এক বছর ধরে চব্বিশ ঘন্টা কাজ করতে থাকে, তবে এই পদার্থের এক গ্রামের খরচ উঠবে।

ব্যাপারটা ঠিক কি: অ্যান্টিম্যাটার হল এমন একটি জিনিস যা পদার্থের বিপরীতে কাজ করে। অর্থাৎ পদার্থের চেয়ে এর আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অ্যান্টিম্যাটারে থাকা কণাগুলির বৈদ্যুতিক চার্জ বিপরীত হয়। বিগ ব্যাং-এর পরে, অ্যান্টিম্যাটার তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আজকের দিনে এটি প্রায় বিরল। তবে, এর পেছনে থাকা কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা আজও দ্বন্দ্বে রয়েছেন। পাশাপাশি, বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে, দূরবর্তী মহাবিশ্বে অ্যান্টিম্যাটার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কে আবিষ্কার করেছেন: অ্যান্টিম্যাটার সম্পর্কে সর্বপ্রথম বর্ণনা করেছিলেন ব্রিটিশ পদার্থবিদ পল ডিরাক (Paul Dirac)। পাশাপাশি, তাঁর এই সম্পর্কিত তত্ব নিউ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। যদিও, প্রথমে বিজ্ঞানী এই উপাদানটি সম্পর্কে বলতে দ্বিধায় ছিলেন। তাই তিনি বলেছিলেন যে, প্রতিটি পদার্থের একটি আয়নার মত প্রতিচ্ছবি থাকে, যা তার বিপরীতে কাজ করে। আর এভাবেই তিনি অ্যান্টিম্যাটারের বর্ণনা দেন।সর্বোপরি, পরবর্তীকালে তিনি এই কাজের জন্য নোবেল পুরস্কারও পান।

কি কাজে লাগে: পদার্থ যখন অ্যান্টিম্যাটারের সংস্পর্শে আসে তখন উভয়ই একে অপরকে ধ্বংস করে। আর ওই সময় বিপুল শক্তি নির্গত হয়। এই বিষয়ে জানার পর থেকেই বিজ্ঞানীরা এমন একটি মহাকাশযান তৈরি করার কথা ভাবছেন যা মহাকাশের রহস্যে খুঁজতে সহজেই পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই নাসা ২০১০ সালে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও তৈরি করেছিল। যেখানে বলা হয়েছে কিভাবে অ্যান্টিম্যাটার ব্যবহার মহাকাশযানের জগতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।

উল্লেখ্য যে, বিজ্ঞানীরা অ্যান্টিম্যাটারকে আরও ভালো ভাবে বুঝতে এটিকে তৈরি করার চেষ্টা করছেন এবং খুব অল্প পরিমাণে প্রস্তুতও করা হয়েছে। তবে, এখনও ওই পরিমান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও, বিজ্ঞানীদের দাবি, এটি অতি দ্রুতগতির সংঘর্ষের (Ultra High-Speed Collision) মাধ্যমে প্রস্তুত করা যেতে পারে। মূলত, এটা হল এমন একটি ঘটনা যেখানে কোনো বস্তু খুব দ্রুত একটি স্থির উপাদান বা চলমান উপাদানের সাথে সংঘর্ষ করে। যার ফলে এতে প্রচুর শক্তিও উৎপন্ন হয়। যেখানে সাধারণ কণার পাশাপাশি অ্যান্টি-কণাও থাকে।

antimatter

এদিকে, পদার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা এই বস্তুটি এতটাই বিপজ্জনক যে, এর একটি ক্ষুদ্র অংশও যে কোনো শক্তিশালী বোমার চেয়ে দ্রুত পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করতে পারে। এমনকি এর বিপজ্জনক ব্যাখ্যা নিয়ে একটি বইও লেখা হয়েছে। এঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস নামের এই বইটিতে বোঝানো হয়েছে কিভাবে একটি সিক্রেট সোসাইটি ভ্যাটিকান সিটিতে বোমা মারার চেষ্টা করেছিল। আর এই আশঙ্কাতেই বিজ্ঞানীরা অত্যধিক পরিমানে অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করা থেকে বিরত থাকছেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর