কলেজ ছেড়ে ওয়েটারের কাজ! আজ মাত্র ২৬ বছর বয়সেই তৈরি করেছেন কোটি টাকার ব্যবসা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেক মানুষই চান জীবনে সফলতার শীর্ষে পৌঁছতে। সেই লক্ষ্যে স্থির থেকেই অনেকেই শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা এবং বাধাকে দূরে সরিয়ে রেখে অক্লান্ত পরিশ্রমের ওপর ভিত্তি করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষমও হন তাঁরা। তবে, সকলেরই এই যাত্রাপথ অত্যন্ত কণ্টকাকীর্ণ হলেও অনেকেই খুব কম বয়সেই পেয়ে যান সফলতার স্বাদ! আর যার ফলে তাঁরা বাকিদের কাছে হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণার উৎসও।

আমরা সকলেই জানি যে, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প হয়না। অর্থাৎ, আপনি যত পরিশ্রম করবেন তার ফল ততটাই ভালো হবে। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা ঠিক সেইরকমই এক লড়াকু এবং পরিশ্রমী যুবকের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি আজ সকলের কাছেই এক “আইকন” হয়ে উঠেছেন।

মূলত চা বিক্রির মাধ্যমেই তিনি আজ সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। খবরের শিরোনামে উঠে আসা ওই যুবকের নাম প্রশান্ত বিল্লোরে হলেও তিনি ভারতে “MBA Chaiwala” নামেই সমধিক পরিচিত। যদিও, তাঁর এমন নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আসল রহস্য!

আর পাঁচজনের মত প্রফুল্লও MBA-র মাধ্যমে নিজের কেরিয়ারকে সাজাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সেখানে কিছুতেই মন বসছিল না তাঁর। বরং, তিনি চেয়েছিলেন নতুন কিছু করতে। এদিকে, ব্যবসার প্রতি তাঁর একটা আগ্রহ ছিলই। আর সেই মেলবন্ধনই প্রফুল্লকে আজ নিয়ে এসেছে এই জায়গায়। একটা সময়ে তিনি MBA ছেড়ে রাস্তার ধারেই শুরু করেন তাঁর ব্যবসার প্রথম ধাপ চা বিক্রির মাধ্যমে।

এই প্রসঙ্গে প্রফুল্ল জানিয়েছেন “আমার সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, আমি যখন ক্যাটে ভালো নম্বর পাইনি তখন আমি হতাশ হয়েছিলাম। তাই আমি অন্যকিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি MBA করি। এরপর আমি এদিক-ওদিক অনেক ঘুরেছি, কিন্তু আমি আহমেদাবাদে পৌঁছনোর পর সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। একটি রেস্টুরেন্টে আমি পার্ট-টাইম চাকরিও পাই।”

পাশাপাশি, তিনি আরও জানান যে, “জানতাম আমার বাবা-মা বুঝবেন না, কারণ তারা ডিগ্রি চেয়েছিলেন। তাই MBA কলেজে ভর্তি হয়ে এরপর আমি পড়াশোনা এবং কাজ দুইই করছিলাম। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, আমি একজন ছাত্র থেকে একজন ক্যাশিয়ার হিসেবে বেশি শিখছিলাম। আমি আমার নিজের ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নিজের ব্যবসা শুরু করার জন্য আমার কাছে যথেষ্ট টাকা ছিল না। এরপর একদিন আমি একজন চা পানকারীর সাথে কথা বলি।এবং তারপরই বাবার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়ে চায়ের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম।”

যদিও, চায়ের দোকান খুলে রাতারাতি তিনি সফলতা পাননি। বরং প্রতিটি ধাপে তাঁকে একাধিক বাধার সম্মুখীনও হতে হয়েছে। প্রথম দিনে মাত্র ১ কাপ চা বিক্রি করেন প্রফুল্ল। কিন্তু দ্বিতীয় দিন ভালোই যায় তাঁর। শেষমেশ তাঁর দোকান রীতিমত সকলের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায় এবং দেশের মানুষও তাঁর এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে পারেন।

এমতাবস্থায়, একটা সময়ে তিনি মাসে ১৫ হাজার টাকারও বেশি উপার্জন করতে থাকেন। এদিকে, প্রফুল্ল এই কাজেই সবকিছু দিতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি MBA-র পড়া ছেড়ে দেন। এরপর অনেকেই তাঁকে উপহাস করা শুরু করলেও তিনি সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকেন। এমনকি, তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় বড় অর্ডারও পেতে থাকেন।

E5tHrdwVUAQPeg1

তারপর প্রফুল্ল প্রায় ২ বছর পর তাঁর প্রথম ক্যাফে খোলেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রফুল্লের ব্যবসায়িক উন্নতি দেখে তাঁর বাবা-মাও অত্যন্ত খুশি হন। বর্তমানে সমগ্র ভারত জুড়েই “MBA Chaiwala”-র ফ্র্যাঞ্চাইজি রয়েছে। এদিকে, কালের নিয়মে যারা তাঁকে উপহাস করতে চেয়েছিলেন তাঁরাও এখন প্রফুল্লের সাফল্যের প্রশংসা করেন।

প্রফুল্ল জানিয়েছেন যে, “এখন লোকেরা আমার কাছে পরামর্শ চায়। আমি তাদের বলি ডিগ্রি কোনো ব্যাপার না। আমি এখানে যা পছন্দ করি সেটাই করি।” বর্তমানে তিনি কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা সামলাচ্ছেন। পাশাপাশি, দেশের নবীন প্রজন্মদেরও তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করেন প্রফুল্ল।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর