একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে শুরু করে আজ পুরো দেশে ব্যবসা করছেন রমা, ২০ টি গ্রামের মহিলাদের দিয়েছেন কাজ

বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবনের সবচেয়ে চিরন্তন সত্য হল যিনি যত বেশি পরিশ্রম করবেন তিনি তত দ্রুত সাফল্যের স্বাদ পাবেন। সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে তাই জয় করে সকলের উচিত সঠিকভাবে পরিশ্রম করে যাওয়া। ঠিক যেমন করে দেখিয়েছেন নৈনিতালের রামগড় ব্লকের নাথুভাখান গ্রামের বাসিন্দা রমা বিশত। প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম থেকেই ব্যবসা শুরু করে আজ তিনি ২০ টি গ্রামের মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন।

২০১৩ সালে “অ্যাপল জোন” নামে এক ব্যবসার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন রমা। এদিকে, বাড়ি থেকে অনেক দূরে চাষের ক্ষেত্র হওয়ার কারণে রমা অন্য কাজের জন্য আর সময় পেতেন না। এমতাবস্থায়, রমা সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁকে আলাদা কিছু করতে হবে। তারপরেই তিনি বাগান করার কথা ভাবেন। দিনরাত পরিশ্রম করার পাশাপাশি সংসারের কাজ সামলে তিনি কৃষিকাজ এবং বাগান তৈরি করতে থাকেন।

রমার উদ্যোগ সকলের কাছে নজির হয়ে ওঠে:
যদিও, এক্কেবারে প্রথম দিকে রমাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। পরিবারের পক্ষ থেকেও বিশেষ কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি। মূলত সকলে “নারীরা ব্যবসা পারেন না”-এই মতবাদে বিশ্বাসী থাকায় কেউই সাহায্য করেননি রমাকে। যদিও, তিনি হাল ছাড়েননি। বর্তমানে রমার কঠোর পরিশ্রম ফলপ্রসূ হয়েছে এবং আজ তিনি পাহাড়ের মহিলাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।

রমা তাঁর গ্রাম নাথুভাখানে একটি বাগান তৈরি করেন এবং সেখানে তিনি আপেল, পিচ, খোবানি, কিউইর মত একাধিক ফলের গাছ রোপণ করেন। রমা তাঁর বাগানের উৎপাদিত ফল এবং আশেপাশের আরও ১০-১২ টি গ্রাম থেকে ফল সংগ্রহ করে আচার, কিউই চাটনি, কিউই স্কোয়াশ, আপেল জ্যাম সহ একাধিক পণ্য তৈরি করেন। পাশাপাশি, বাজারে এগুলির চাহিদা যথেষ্ট বেশি থাকায় সেগুলি বিক্রিও হয় ভালো দামে।

রমার ভেষজ বাগানে ভেষজ উদ্ভিদের চাষও করা হয়:
রমা তাঁর কাজের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যান। তিনি স্নাতক হওয়ার পর সোশ্যাল ওয়ার্কে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও পেয়েছেন। ২০১০ সালের পর তিনি ভেষজ গাছের চাষ শুরু করেন। এখন তাঁর ভেষজ বাগানে মিষ্টি তুলসী, গোলমরিচ, পুদিনা, লেমন গ্রাস, অর্জুন, মৌরি, অশ্বগন্ধা সহ একাধিক গাছের চাষ করা হয়। তিনি এগুলি থেকে অনেক ধরণের পণ্য তৈরি এবং বিক্রি করেন। এছাড়াও, তিনি ভেষজ চা এবং গোলাপ জল প্রস্তুত করেন, যার চাহিদাও বেশি। অনলাইন এবং অফলাইনে তাঁদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “লকডাউনের দু’বছরে আমাদের অনেক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ভেতরে ভেতরে খুব হতাশ ছিলাম। এমনকি, একটা সময়ে আমরা ফল প্রক্রিয়াকরণের কাজ বন্ধ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তা আমরা করিনি। এখন ধীরে ধীরে ব্যবসা আবার ট্র্যাকে ফিরে এসেছে, দেখা যাক ভবিষ্যতে কোথায় পৌঁছানো যায়। করোনার এই খারাপ সময় যেন আর না আসে।”

জাতি গঠনে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে:
পাশাপাশি রমা জানান, “জাতি গঠনে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নারীদের ক্ষমতায়ণ করা উচিত। আমি গর্বিত যে আমি পাহাড়ের মেয়ে। আজও দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। নারীর প্রতি পুরোনো মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে নারীদের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আজ নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের সাফল্যের পতাকা ওড়াচ্ছে। সমাজ নির্মাণে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, তাই নারীকে স্বাবলম্বী করতে হবে। তাঁদের উন্নত শিক্ষা দিতে হবে।”

WhatsApp Image 2022 04 24 at 1.58.37 PM

এছাড়াও, রমা সুযোগ করে দিয়েছেন কর্মসংস্থানেরও। তিনি জানান, “আমি আনন্দিত যে আমার কারণে আশেপাশের গ্রামের লোকেরা তাঁদের মেয়েদের ভালো শিক্ষা পেতে এবং স্বপ্ন পূরণ করতে সম্ভাব্য সব উপায়ে সহায়তা করছেন। আমার নিজের মেয়ে এই বছর B.Tech-এ ভর্তি হয়েছে। আমার সফলতার পেছনে আমার স্বামীরও একটা বড় অবদান আছে। তাঁকে ছাড়া এসব সম্ভব হত না। তাঁদের সমর্থন ও উৎসাহের কারণেই আমি এতদূর আসতে পেরেছি।”

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর