বাংলাহান্ট ডেস্ক : স্টাডি রুম বলতে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার সহ একটি নিস্তব্ধ কোনো ঘর। কিন্তু কোন নিম গাছ কারোর স্টাডি রুম হতে পারে? আবার সেই স্টাডি রুমের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে বইপত্র! বর্তমান যুগে অনেক কিছুই ইন্টারনেট নির্ভর। মোবাইল ইন্টারনেট ছাড়া পড়াশোনাও সম্ভব নয়। তাই আমরা আজ এমন একজনের কথা বলতে চলেছি যিনি ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ার জন্য নিমগাছে বানিয়ে ফেলেছিলেন ঘর।
গাছে তৈরি করা সেই স্টাডি রুমে চলত তার পড়াশোনা। এইভাবে পড়াশোনা করেই যুবক সাফল্য পেলেন টেট পরীক্ষায়। জয়পুর (Jaypur) গ্রাম অবস্থিত বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির অধীন শিলদা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে। এই গ্রামটি জঙ্গলে ঘেরা। এই গ্রামের বাসিন্দারা জেরবার ইন্টারনেট (Internet) সংযোগের সমস্যায়। ঠিকমতো পাওয়া যায় না ইন্টারনেট সংযোগ। এই গ্রামেরই বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী বরুণ এবার সফলতা পেয়েছেন টেট পরীক্ষায়।
তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ২০১৪ সালে। এরপর শিলদা কলেজ থেকে বিএসসি স্নাতক করেছেন তিনি। করেছেন বিএড। বরুণের বাবা বাণী কুমার দাস চার বছর আগে দুর্ঘটনায় মারা যান। তার দাদা ছোট থেকেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। টিউশন পড়িয়ে বরুণ নিজের খরচা চালান। এর পাশাপাশি তিনি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তার গ্রামে মোবাইল ইন্টারনেটের সমস্যা। মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য তিনি একটি নিমগাছের ডালে তৈরি করেন ঘর।
বরুণ তিনটি ডালের মাঝে বস্তা, ত্রিপল, ফেস্টুন-সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে একটি ছোট ঘর তৈরি করে ফেলেন গাছে। এই ঘরে একটি ছোট জানলা রয়েছে। এছাড়াও বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য রয়েছে ত্রিপল। দশ জনের বসার মতো এই ঘরে রয়েছে সিঁড়ি। বরুণ জানিয়েছেন, “আমাদের গ্রামে মোবাইলে নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য ঠিকমতো কথাই বলা যায় না। কিন্তু পড়াশোনার জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন।”
পাশাপাশি তার আরোও সংযোজন, “নিম গাছের ডালে বাড়ি বানিয়েছি। টেট পরীক্ষা দিয়েছিলাম। পাস করে খুবই আনন্দ লাগছে।” আমাদের কাছে মোবাইল ফোন নিত্যদিনের বিনোদনের সঙ্গী। সেই জায়গায় বরুণের মতো মেধাবী ছাত্র মোবাইল ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছেন পরীক্ষায়। সমাজের কাছে বরুণ যে নতুন নজির সৃষ্টি করলেন তা বলাই যায়।