শিক্ষক থেকে রাতারাতি ঝাড়ুদার বানিয়ে দেওয়া হল ৩৪৪ জনকে! আদিবাসী শিক্ষাকেন্দ্রে ছড়ি চালাল কেরল সরকার

বাংলা হান্ট ডেস্ক: এমনও কি সম্ভব? দীর্ঘদিন শিক্ষকতার কাজ করে এসে হঠাৎই এক সিদ্ধান্তের জেরে এক্কেবারে সাফাইকর্মীতে পরিণত হলেন ৩৪৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঠিক এইরকম ঘটনাই ঘটেছে কেরালায়। আর তারপরেই রীতিমত হইচই পড়ে গিয়েছে সব মহলে।

জানা গিয়েছে যে, কেরালা সরকার গত ৬ মার্চ সে রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত একাধিক এলাকার এক জন শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে নিয়ে চালু থাকা বহুমুখী শিক্ষাকেন্দ্রগুলি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারপরেই গত শুক্রবার ওই আদিবাসী শিক্ষাকেন্দ্রগুলি বন্ধ করার জন্য সরকারি নির্দেশিকা জারি করা হয়। শুধু তাই নয়, কেরলার স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে যে, সেই শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাকে এবার সাফাইকর্মী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সরকারের এই সিদ্ধান্তের জেরেই রাজ্যের আদিবাসী শিক্ষাকেন্দ্রগুলির ৩৪৪ জন শিক্ষকের পদমর্যাদাই কার্যত পাল্টে গিয়েছে এখন। যদিও, এই সমগ্র ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেরালার শিক্ষা সচিব মহম্মদ হানিস জানিয়েছেন যে, ‘‘সরকার আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বহুমুখী শিক্ষাকেন্দ্রগুলির প্রায় ৫০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে এই মুহূর্তে প্রয়োজন হবে না। যদিও, তাঁদের সাফাইকর্মী বা অন্য কোনো পদে নিয়োগের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি।”

এদিকে, হঠাৎ করে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে কার্যত হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দীর্ঘদিন চাকরি করে আসার পর তাঁদের যে এই অবস্থা হবে তা আঁচ করতে পারেননি কেউই। এই প্রসঙ্গে তিরুবনন্তপুরম জেলার অম্বুরি অঞ্চলের কুন্নাথুমালা বহুমুখী শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকা আশা উষা কুমারী জানিয়েছেন যে, তিনিও রয়েছেন এই চাকরি হারানোদের তালিকায়। এমনকি, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, শিক্ষিকা হিসেবে গত শুক্রবারই ছিল তাঁর শেষ ক্লাস। ইতিমধ্যেই, তাঁদেরকে সাফাইকর্মী পদে নিয়োগের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে।

ভারাক্রান্ত সুরে তিনি জানিয়েছেন, “প্রত্যন্ত ওই আদিবাসী শিক্ষাকেন্দ্রে পড়ানোর জন্য প্রতিদিন প্রায় ১৪ কিলোমিটার পাহাড়ি পথে হেঁটে, যাতায়াত করতে হত। এতদিন ধরে ওদের পড়াচ্ছি। শেষ দিন ক্লাস করার সময় পড়ুয়ারা বিশ্বাসই করতে চায়নি এটাই আমার শেষ ক্লাস। এত দিন গরিব আদিবাসী পরিবারের শিশুদেরকে পড়িয়ে এসেছি। এখন সত্যিই খুব হতাশ লাগছে!”

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর