বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্কঃ আজ ফুটবল বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারের জন্মদিন। আজ আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি লিওনেল মেসির (Lionel Messi) জন্মদিন। তার বিশ্বজয়ের পর সাত মাস অতিক্রান্ত। এই প্রথমবার একজন বিশ্বজয়ী ফুটবলার হিসেবে নিজের জন্মদিন পালন করছেন ‘লা পুলগা’। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা লিওনেল মেসি সংক্রান্ত এমন দশটি তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরব যা হয়তো আপনারা আগে শোনেননি।
১. সোনার বল: লিওনেল মেসি একমাত্র ফুটবলার যিনি ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে দুটি গোল্ডেন বল জিতেছেন। ২০১৪ সালে জার্মানির কাছে ফাইনাল হেরে আর্জেন্টিনার স্বপ্নভঙ্গ হলেও ২০২২ সালে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে লিওনেল মেসিরা নিজেদের ৩৬ বছরের বিশ্বকাপের খরা কাটিয়েছেন।
২. মেসির সেলিব্রেশন: অনেকেই হয়তো দেখেছেন যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেসি গোল করে তার দুই হাতের তর্জনী তুলে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না মেসি এমন ভাবে উদযাপন করেন নিজের দিদিমা সিলিয়াকে স্মরণ করে। খুব ছোটবেলায় তিনি ছোট্ট মেসির উৎসাহ জাগিয়ে তুলেছিলেন ফুটবলের প্রতি। কিন্তু ১৯৯৮ সালে তিনি মারা যান। ফলে মেসিকে একজন সফল ফুটবলারে পরিণত হতে দেখে যেতে পারেননি তিনি।
৩. আর্জেন্টিনায় অভিষেক: মেসির আর্জেন্টিনা জার্সিতে অভিষেকটা ঘটেছিল একটি দুঃস্বপ্নের মত। ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে তিনি হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের, পুস্কাস স্টেডিয়ামে একজন পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন এবং মেজাজ হারিয়ে মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন হয়তো কেউ ভাবতেই পারেননি যে তিনি আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোল সংগ্রাহক হবেন।
৪. ইপিএল ক্লাব: অনেকেই বলে থাকেন যে মেসি বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ লিগ ইপিএলে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেননি। কিন্তু যখন যখন বার্সেলোনা বা পিএসজির জার্সি গায়ে তিনি ইপিএলের প্রতিপক্ষদের মুখোমুখি হয়েছেন, তখন তখন মেসির বাঁ পা যেন ঝড় তুলেছে মাঠের মধ্যে। ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইপিএলের ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি গোল করা ফুটবলারের নাম মেসি।
৫. ট্রফি সংখ্যা: মেসি যখন বার্সেলোনার সিনিয়র দলে খেলা শুরু করেছিলেন তখন সেখানে চলছে স্বর্ণযুগ। রোনাল্ডিনহো, স্যামুয়েল এটো, থিঁয়ের অঁরি, জাভি, ইনিয়েস্তাদের মতো ফুটবলারদের দলে পাওয়া লিওনেল মেসিকে কোনওদিনই ট্রফি নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। এই মুহূর্তে তার নামের পাশে রয়েছে ৪৩ টি দলগত ট্রফি। পিএসজিতে খুব সফল না হলেও প্যারিসের ক্লাবটিতে তিনটি ট্রফি জিতেছেন তিনি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে নিজের কেরিয়ারের শেষপর্বে এসে পরপর দু বছরে তিনটি ট্রফি জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছেন মেসি। বিশ্ব ফুটবলে আর কেউ তার মতন এত ট্রফি জিততে পারেনি।
৬. ব্যালন ডি-ওঁর: বিশ্ব ফুটবলে যে ব্যক্তিগত সম্মানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় সেই ব্যালন ডি-ওঁর একমাত্র ফুটবলার হিসেবে মেসি জিতেছেন পাঁচবারের বেশি। তারপরে এই তালিকায় রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো যার ঝুলিতে রয়েছে পাঁচটি ব্যালন ডি-ওঁর শিরোপা। মেসির কাছে এই মুহূর্তে এই পুরস্কার রয়েছে ৭টি। তবে খুব সম্ভবত বিশ্বকাপ জয়ের জন্য আরও একবার তিনি এই শিরোপা জিততে চলেছেন।
৭. ১০০ গোল: বিশ্ব ফুটবলে তৃতীয় ফুটবলের হিসেবে তিনি সম্প্রতি দেশের জার্সিতে ১০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এই মুহূর্তে তার আন্তর্জাতিক গোল সংখ্যা ১০৩। তার আগে রয়েছেন শুধুমাত্র ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (১২৩) এবং ইরানের আলি দাই (১০৯)। মেসি ২০২২ সালে যে ইউনিফর্মে ছিলেন সেই ফর্মে থাকলে হয়তো তিনি দুজনকেই টপকে যেতে পারবেন কিছু বছর পরে।
৮. ফ্রি কিক কিং: মেসির খেলার এই দ্রষ্টব্যটি তার কেরিয়ারের দ্বিতীয় ভাগে এসে পূর্ণতা লাভ করেছে। এই মুহূর্তে অবসর না নেওয়া ফুটবলারদের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ ফ্রি কিক থেকে গোল করেছেন। তার নামের পাশে রয়েছে ৬৩ টি ফ্রি কিক গোল। অবসর না নেওয়া ফুটবলারদের মধ্যে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (৬০)।
৯. চোটপ্রবণতা: লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো হলেন দুই এমন ফুটবলার যারা নিজের গোটা কেরিয়ারটা সুস্থভাবে খেলে কাটিয়েছেন এবং খুব বেশি তাদেরকে চোটের কবলে পড়তে দেখা যায়নি। বিশ্ব ফুটবলে এমন অনেক কিংবদন্তি এসেছেন যারা হয়তো নিজের প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পাননি চোটের কারনে। কিন্তু মেসি সেই ফুটবলারদের মধ্যে একজন যিনি নিজের কেরিয়ারে অসংখ্য ম্যাচ খেললেও খুব কম সময়েই চোটের জন্য মাঠের বাইরে কাটিয়েছেন।
১০. পিএসজি কেরিয়ার: মেসির কেরিয়ারের একটা মাত্র কালো দাগ হিসেবে থেকে যাবে হয়তো পিএসজি-তে কাটানো দুটি বছর। এমবাপ্পে এবং নেইমারের মত দুই ফুটবলার দলে থাকায় মেসি প্রচুর অ্যাসিস্ট করেছেন এই দুই বছরের। কিন্তু তার মরশুম প্রতি গোল সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে এই সময়টায়। তার পাশাপাশি যে কারণে মেসিকে পিএসজিতে আনা হয়েছিল, অর্থাৎ ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের লক্ষ্য, সেটা পূরণের ধারে কাছে যায়নি এই সময়টা প্যারিসের ক্লাবটি।