বাংলা হান্ট ডেস্ক: কারোর জীবন বাঁচানোর চেয়ে আর কোনো মহৎ কাজ হতে পারে না। আর সেই জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন কাশ্মীরের এক যুবক। বর্তমান সময়ে যখন সমগ্র দেশেই ধর্মীয় মতবিরোধ এবং বিভিন্ন উষ্কানীমূলক ঘটনার প্রসঙ্গ সামনে আসছে ঠিক সেই আবহেই ২২ বছরের ইমতিয়াজ খান প্রমাণ করে দেখালেন সমস্ত কিছুর উর্ধ্বে মানবিকতাই আসল। আর তাই তো তিনি অমরনাথ দর্শনে আসা তীর্থযাত্রীর জীবন বাঁচিয়ে নিজেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।
মূলত, ইমতিয়াজ এক অমরনাথ তীর্থযাত্রীকে পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান। এই প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, ইমতিয়াজ তাঁর ঘোড়া নিয়ে হাঁটছিলেন। সেই সময় তিনি বুঝতে পারেন যে, এক তীর্থযাত্রী ঘোড়ার পিঠেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল যে, তিনি যে কোনো মুহূর্তেই পড়ে যেতে পারেন। এমতাবস্থায়, অবস্থা বেগতিক বুঝে ইমতিয়াজ ওই তীর্থযাত্রীকে সতর্ক করতে দৌড়ে গিয়ে তাঁকে জাগানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু, সেই সময় তিনি দুর্ভাগ্যবশত ভারসাম্য হারিয়ে পাহাড়ের ৩০০ ফুট নিচে একটি খাদে পড়ে যান।
এদিকে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাহলগামের পনি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম নবী লোন জানিয়েছেন যে, ইমতিয়াজ খান ঘোড়ার পিঠে ঘুমিয়ে থাকা যাত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন এবং সেখানেই পড়ে যান। আর এভাবেই তিনি তাঁকে জাগিয়ে দিয়েও নিজে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেন। পরে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের পর্বতারোহণ উদ্ধারকারী দল (এমআরটি) বহু কষ্টে ইমতিয়াজের দেহ উদ্ধার করে।
এই প্রসঙ্গে এমআরটি প্রধান রাম সিং সংবাদমাধ্যমকে জানান যে, উদ্ধারকারী কর্মীরা দড়িতে নেমে একটি ফাটল থেকে তাঁকে টেনে এনেছে। পাশাপাশি, তিনি আরও বলেন, “আমরা তাঁকে টেনে নিয়েছি এবং বাঁচানোর চেষ্টাও করেছি। প্রথমে স্ট্রেচারে করে পঞ্চতরণী মেডিকেল ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হলেও তিনি মারা যান।”
পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছিলেন ইমতিয়াজ: এদিকে, ইমতিয়াজের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ইমতিয়াজের মামা নাজির খান জানিয়েছেন, ইমতিয়াজের পরিবারে তাঁর বাবা-মা এবং চার ভাই-বোন ছাড়াও তাঁর স্ত্রী এবং আট মাসের এক সন্তান রয়েছে। পাশাপাশি, ইমতিয়াজের বাবা আংশিকভাবে অন্ধ। তাই, তিনি এখন আর তেমন কাজ করতে পারেন না। এছাড়াও, তাঁর তিন বোনের এখনও বিয়ে হয়নি। এমতাবস্থায়, বর্তমানে সংসারের ভার এসে পড়েছে ইমতিয়াজের ছোট ভাইয়ের ওপর।