বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ ভোটে জয়লাভের সম্ভাবনা দেখিয়েও অবশেষে ৭৭-এ থামে বিজেপির (Bharatiya Janata Party) রথ। পরবর্তীতে দলত্যাগ করেন একাধিক নেতা-মন্ত্রীরা; আবার অপরদিকে দলীয় সংগঠনও ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিজেপির এহেন শোচনীয় পরিস্থিতি মাঝে অবশ্য উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে আরএসএসের (RSS) শাখার সংখ্যা। বর্তমানে একটি পরিসংখ্যান সেই বিষয়টি তুলে ধরল বঙ্গবাসীর সামনে। যদিও এটিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল (Trinamool Congress) শিবির।
উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় হারের পর একের পর এক নেতা মন্ত্রীরা যেমন শাসক দলে যোগদান করে চলেছেন, আবার অপরদিকে দলের সংগঠন তলানিতে গিয়ে ঠেকার পাশাপাশি একাধিক নির্বাচনে পরাজিত হয়ে চলেছে পদ্মফুল শিবির। এই পরিস্থিতিতে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে নিজেদের ক্ষমতা পুনরুত্থানে তৎপর সকলে আর এর মাঝেই এবার আরএসএসের একটি পরিসংখ্যানে রীতিমতো চমক লেগেছে সকলের।
সঙ্ঘের দাবি অনুযায়ী, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে আরএসএস শাখার সংখ্যা প্রায় ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রসঙ্গত, এ বছর ১৫ থেকে ১৮ই অক্টোবর প্রয়াগরাজে আরএসএস-এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দেশের প্রতিটি রাজ্যে তাদের সাংগঠনিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রিপোর্ট প্রদান করা হয়। সূত্রের খবর, বর্তমানে বাংলায় সঙ্ঘের উত্থান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এক্ষেত্রে শাখার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সামাজিক কাজের গতিতে এসেছে বাড়বাড়ন্ত।
এই প্রসঙ্গে সঙ্ঘ চালক অজয় নন্দী জানান, “নির্দিষ্ট সংখ্যা বৈঠকের পর জানা যাবে। তবে ইতিমধ্যে আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান এসে পৌঁছেছে, সেই অনুযায়ী বাংলায় আরএসএস-এর শাখার সংখ্যা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে সামাজিক কাজেও গতি এসেছে। আসলে আমরা ময়দানে কাজ করে থাকি, সেই কারণে করোনার সময় বেশ কয়েকটি শাখা বন্ধ করে দিতে হলেও বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আরো অনেক শাখা শুরু করা গিয়েছে।”
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুই মেদিনীপুর, উত্তর হুগলি এবং হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় সঙ্ঘের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে আর এই ব্যাপারটি বর্তমানে চিন্তায় ফেলেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন আর তার আগে আরএসএসের উন্নতি হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় বেশ প্রভাব ফেলবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তবে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “সক্রিয়তা নিয়ে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা জানি, বিজেপিতে সিপিএমের ভোট গিয়েছে। এক্ষেত্রে যদি ওদের শাখার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, তাহলে সিপিএমের ভাবার সময় এসেছে, কাদের থেকে সঙ্গে শক্তি যাচ্ছে সঙ্ঘে।”
অপরদিকে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, “২০ বছর আগে সঙ্ঘের তরফ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মা দুর্গা’ বলা হয়েছিল আর অপরদিকে মুখ্যমন্ত্রী আরএসএস-কে দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়েছিলেন। বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে, আরএসএস নাকি ততটা খারাপ নয় এর থেকে ফায়দা এবং পরস্পরের উপর নির্ভরতার ব্যাপার বোঝা যায়।”
এক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায়, আরএসএস-এর উত্থানের কারণে নির্বাচনে বিজেপির কি আদৌ ফায়দা হবে? এই প্রসঙ্গে বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, “সঙ্ঘ সারা বছর ধরে কাজ করে চলেছে। ওদের প্রভাব পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে পড়ে। তবে আমাদের যদি বাংলায় ভালো ফল করতে হয়, তবে নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আন্দোলন করে যেতে হবে। নয়তো কেবলমাত্র সঙ্ঘের উত্থানের ওপর নির্ভর করে নির্বাচনে ভালো ফল করা অসম্ভব।”