বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ক্রিকেট বাইরে থেকে একটি অত্যন্ত গ্ল্যামারাস খেলা। বাইরে থেকে দেখে নিশ্চয়ই মনে হয় এখানে শেষ কথা বলে ব্যাট এবং বল। কিন্তু ভিতরে রয়েছে নানা ধরনের প্যাঁচ পয়জার। কিছু ক্ষেত্রে ক্রিকেটাররা যে এমন রাজনীতির শিকার হন, তা অস্বীকার করা যায় না। একদিকে যেমন এই রাজনীতিকে ভেঙে দিয়ে কিছু ক্রিকেটার ফিরে আসতে পেরেছেন তেমনি বেশিরভাগই শেষ হয়ে গিয়েছে বহু ক্রিকেটারের জীবন। আসুন আজ দেখে নেওয়া যাক এমন ৫ জন ক্রিকেটারকে যাদের কেরিয়ার শেষ হওয়ার মূল কারণ হয়ে উঠেছে রাজনীতি।
হেনরি ওলোঙ্গা এবং অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারঃ
২০০৩ সালের জিম্বাবুয়ে দল, এতটাই শক্তিশালী ছিল যে বেশ কিছু সময় তারা মাত দিয়েছে ভারতের মতো দলকেও। এই দলের অন্যতম বড় শক্তি ছিলেন বামহাতি ব্যাটসম্যান তথা প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার এবং পেশার হেনরি ওলোঙ্গা। কিন্তু চূড়ান্ত রাজনীতির শিকার হয়ে শেষ হয়ে যায় তাদের ক্রিকেট কেরিয়ার। প্রকৃতপক্ষে, জিম্বাবুয়ের স্বৈরতান্ত্রিক শাসক রবার্ট মোগাবে নিয়ম করেছিলেন যে দলে কেবল মাত্র খেলতে পারবেন কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়রাই। যার প্রতিবাদে সরব হন এই দুই খেলোয়াড়। তাদের প্রতিবাদকে মোটেই ভাল চোখে দেখা হয়নি। যার ফলে দুরন্ত প্রতিভা থাকা সত্বেও শেষ করে দেওয়া হয় তাদের কেরিয়ার। তাদের প্রতিভার স্বরূপ রয়েছে তাদের পরিসংখ্যানেই। জিম্বাবুয়ের জন্য টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ১১ হাজারেরও বেশি রান করেছিলেন অ্যান্ডি। ছিল ১৬টি শতকও। অন্যদিকে নিজের ছোট্ট কেরিয়ারে ওলোঙ্গা শিকার করেছিলেন ১২৬ টি উইকেট।
সৌরভ গাঙ্গুলীঃ
ভারতীয় ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রাজনীতির শিকার যিনি হয়েছেন তিনি প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। ৯২ সালে কেরিয়ারের শুরুতেই তার নামে অপবাদ তৈরি হয় তিনি খেলোয়াড়দের জন্য জল বইতে অস্বীকার করেছেন। চার বছরের জন্য শেষ হয়ে যায় তার কেরিয়ার। ৯৬ সালে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করে সৌরভ বুঝিয়ে দেন তিনি এই মাঠেরই খেলোয়ার। কিন্তু জিম্বাবুয়েতে সেঞ্চুরি করার পরেও কোচ গ্রেড চ্যাপেলের রোষানলে পড়ে ২০০৫ সালে টিম থেকে বাদ পড়েন দাদা। তারপর বহু পরিশ্রমে ছ মাস বাইরে থাকার পর সাউথ আফ্রিকায় ফের তিনি টিমে কাম ব্যাক করেন। প্রথম ম্যাচে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়েই বুঝিয়ে দেন তিনি উত্তর দেবেন তার ব্যাট দিয়েই। কিন্তু ২০০৮ সালে দুর্দান্ত ফর্মে থাকার সত্বেও হঠাৎই অবসর নেন ক্রিকেটের মহারাজ। অনেকেই বলেন অবসর নেওয়ার জন্য কার্যত তার উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন নির্বাচকরা। কারণ তার আগেই ইরানি ট্রফি দলেও জায়গা পাননি তিনি।
বাসিত আলিঃ
ক্রিকেটের বাসিত আলী বিখ্যাত ছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদের মতো ব্যাটিং করার জন্য। তার দুরন্ত মারকুটে ব্যাটিং প্রমাণিত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে যখন মাত্র ৬৭ বলে সেঞ্চুরি করে সকলকে চমকে দেন এই ২২ বছর বয়সী ক্রিকেটার। কিন্তু ১৯৯৫-৯৬ সালে বাসিতের ফর্ম কিছুটা পরে যাওয়ায় বিশ্বকাপের দল থেকে বাইরে রাখা হয় তাকে। কিন্তু বাসিত মন্তব্য করেন, তিনি আসলে মিয়াঁদাদের জন্য পথ তৈরি করেছেন, কারণ মিয়াঁদাদ এই বিশ্বকাপে দুরন্ত পারফরম্যান্স দিতে চেয়েছিলেন। তারপর থেকেই আর বাসিতের দিকে ফিরে তাকাননি সিলেক্টাররা।
আম্বাতি রাইডুঃ
নির্বাচন কখনও কখনও কতটা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে, তার অন্যতম প্রমাণ অম্বতি রাইডু। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে চার নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে ভারতীয় দলের প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনি। কিন্তু একটি ঘরোয়া সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খারাপ পারফরম্যান্স করার পরেই নির্বাচক এমএসকে প্রসাদের মতামত সম্পূর্ণ বদলে যায়। যার ফলে বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাননি এই ক্রিকেটার। তার এই জায়গা না পাওয়া নিয়ে পরবর্তী ক্ষেত্রে মুখ খুলেছেন যুবরাজ সিংহের মত ক্রিকেটাররাও। হতাশ অম্বতি রাইডু শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট থেকেই অবসর নিয়ে নেন। যদিও শেষ পর্যন্ত অবসর ভেঙে এখনও আইপিএল খেলছেন তিনি। কিন্তু ভারতীয় দলে কাম ব্যাক করার সুযোগ হয়নি তার।
সাইমন ক্যাটিচঃ
একটা সময় অস্ট্রেলিয়া টিম এতটাই শক্তিশালী ছিল যে ম্যাথু হেডেন, জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে ক্যাটিচের জায়গা পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। যদিও তাদের অবসরের পর কিছুদিন খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১০ সাল থেকেই কার্যত তার সঙ্গে মতবিরোধ শুরু হয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের। অনেকেই বলেন, এই মতবিরোধের জেরে একাধিক সময় তাকে দলের বাইরে রাখতে শুরু করেন ক্লার্ক। যার ফলে কার্যত শেষ হয়ে যায় তার কেরিয়ার।