বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতের (India) স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালিত হল ২০২২-এ। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে দেশ মুক্তি পেয়েছে ৭৫ বছর হল। তখনকার সমাজে এমন অনেক জিনিস প্রচলিত ছিল যেগুলিকে ফিরে দেখলে বোঝা যায় সেগুলি আসলে সমাজের অন্ধকার দিক। ভারতীয়দের প্রতি একটু বেশিই বিদ্বেষ ছিল ব্রিটিশদের মনে। তারা ভারতীয়দের মানুষ হিসেবে মনে করত না। সে জন্য দেশের মানুষের প্রতি নেমে আসত অন্যায়, অত্যাচার ও অবমাননা।
ব্রিটিশ আমলে দেশের নানা প্রান্তে এমন অনেক জায়গা ছিল যার দরজায় বড় বড় করে লেখা থাকত ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। হ্যাঁ, ভারতীয়দের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করা হত। কিছু সময়ে তো কুকুরেরও অধম মনে করা হত দেশের মানুষকে। স্বাধীনতা আন্দোলনের ফলস্বরূপ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আজ এ দেশ থেকে পাততারি গুটিয়ে ফিরে গিয়েছে বিলেতে। তবে তারা রেখে গিয়েছে একটি মানসিকতা। সাহেবরা চলে গেলেও তারা রেখে গিয়েছে বিদ্বেষ। জ্ঞানীরা যাকে বলেন ‘কলোনিয়াল হ্যাঙ্গওভার’।
বলা হয়, এখনও বহু ভারতীয় ‘কলোনিয়াল হ্যাঙ্গওভার’ কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তারই প্রমাণস্বরূপ আজও দেশে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে ভারতীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ভাবা যায়! স্বাধীন ভারতে এমন জায়গা রয়েছে যেখানে দেশের মানুষই ঢুকতে পারেন না। এই প্রতিবেদনে আমরা জানিয়েছি এমনই কয়েকটি জায়গার ব্যাপারে যেখানে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার নেই ।
গোয়া তার সুন্দর সমুদ্র সৈকত, আবহাওয়া, পর্তুগিজ স্থাপত্য এবং পার্টির কালচারের জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। শুধু দেশের মানুষ নয়, বিদেশি পর্যটকদের কাছেও গোয়া একটি অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। ভারতের রাজ্যের বিচে ভারতীয়রা প্রবেশ করতে পারবেন এটাই তো স্বাভাবিক। তবে জানলে অবাক হবেন, গোয়াতে এমন একটি বিচ রয়েছে যেখানে ভারতীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেই বিচটি শুধুমাত্র বিদেশিরা ব্যবহার করতে পারেন।
হিমালয়ের কোলে ছোট্ট রাজ্য হিমাচল প্রদেশ। এই রাজ্যের যে কোনও জায়গায় গেলেই পাওয়া যায় হিমালয় পাহাড়ের নৈসর্গিক শোভা এবং সেই সঙ্গে দুর্দান্ত আবহাওয়া। সিমলা শহরে যেমন ব্রিটিশ স্থাপত্যের বহু নিদর্শন আজও দেখা যায়। তেমনই মানালি, কাসোল বা অন্যান্য জায়গায় প্রচুর বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন। স্বদেশি পর্যটকদের কাছেও হিমাচল একটি খুবই প্রিয় স্থান। তবে এখানেও একটি ক্যাফে রয়েছে যেখানে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার নেই।
এই ক্যাফের নাম ‘নোর্বুলিঙ্কা’ ক্যাফে। এখানে কেবলমাত্র বিদেশি এবং কিছু বিশেষ ব্যক্তির প্রবেশের অধিকার রয়েছে। হিমাচলের কাসোলেও এমন একটি ক্যাফে রয়েছে। নাম ‘ফ্রি কাসোল’ ক্যাফে। হিমাচল প্রদেশের একটি বৈশিষ্ট হল এখানে প্রচুর ইজরায়েলি পর্যটক ভ্রমণে আসেন। এই ক্যাফেটিও চালান কিছু ইজরায়েলি ব্যক্তি। তারাই এমন নিয়ম বানিয়েছেন যে সেখানে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার নেই।
তামিলনাড়ুর অন্যতম বড় শহর চেন্নাই। এই শহরটিরও প্রাকৃতিক শোভা অতুল্য। এখানে সমুদ্রের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতির এক মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়। তবে এখানেও একটি হোস্টেল রয়েছে যেটিকে ঘিরে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ রয়েছে। জায়গাটির নাম ‘রেড ললিপপ হোস্টেল’। এখানে থাকতে গেলে আপনাকে পাসপোর্ট দেখাতে হবে। কারণ এখানে সাধারণ ভারতীয়দের থাকার অধিকার নেই। ওই হোস্টেলের দাবি, তারা শুধুমাত্র এমন পর্যটকদের পরিষেবা দেন যাঁরা প্রথম বার ভারতে আসেন।
বেঙ্গালুরুকে বলা হয় প্রযুক্তির শহর। ভারত তথা বিশ্ব বিখ্যাত সব আইটি সংস্থার হেডকোয়ার্টার এই শহরে। এছাড়াও এখানে স্টার্ট আপের একটা কালচার রয়েছে। বলা হয়, বেঙ্গালুরুতে চিরবসন্ত থাকে। কারণ এখানকার আবহাওয়া। এমন সুন্দর শহরেও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ কলোনিয়াল হ্যাঙ্গওভারের এক জ্বলজ্যান্ত নিদর্শন। এখানে এমন একটি হোটেল রয়েছে যেখানে ভারতীয়দের ঢুকতে দেওয়া হয় না।
হোটেলটির নাম ‘উনো ইন হোটেল’। এই হোটেলটি ২০১২ সালে তৈরি হয়। এখানে শুধুমাত্র জাপানি অতিথিরা ঢুকতে পারতেন। এখানে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার ছিল না। বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগে এই হোটেলটি চালু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়।
সমুদ্রের শোভা উপভোগ করতে অনেকেই চলে যান আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপে। এখানে একটি কারাগার রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বন্দি করে রাখা হত। সেই যুগে এটিকে বলা হত ‘কালাপানি’। স্বাধীনতা আন্দোলনের জ্বলজ্যান্ত নিদর্শন এই দ্বীপপুঞ্জে একটি দ্বীপ রয়েছে যেখানে কেবল ভারতীয় নয়, কোনও মানুষেরই প্রবেশের অধিকার নেই।
এই দ্বীপটির নাম উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ। এই দ্বীপে একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে। সভ্যতার শুরু থেকে আজ অবধি সেই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাইরের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেইনি। সেই জন্য বিভিন্ন কারণে ভারত সরকার থেকে কাউকেই এই দ্বীপে যেতে দেওয়া হয় না। ২০১৮ সালে একজন মার্কিন খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক সকলকে ফাঁকি দিয়ে এই দ্বীপে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি আর ফিরে আসেননি। এই দ্বীপের আদিবাসীরা তাঁকে হত্যা করে।