রক্তের সম্পর্ক নেই, তবুও পরম স্নেহে ছ’টি বাঘের ছানাকে বড় করেছে ‘মা’ কুকুর, শোনে সমস্ত কথা

বাংলাহান্ট ডেস্ক: মাতৃত্বের অনুভূতি সবার মধ্যেই আছে। তা সে মানুষই হোক বা অন্য কোনও প্রাণী। অধিকাংশ প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, শৈশব থেকে যে তাদের বড় করে তুলেছে, তাকেই মা হিসেবে চিনেছে তারা (Unconventional relationships)। আজকের প্রতিবেদনে এমনই এক বিরল মাতৃত্বের কথা বলব। মাতৃত্ব ছাপিয়ে যেতে পারে সব ধরনের নিয়ম, সব ধারণাকেই। এমনকি খাদ্য ও খাদকের চিরাচরিত সম্পর্ককেও।

এমনই এক বিরল উদাহরণ হিসেবে উঠে আসবে চিনের একটি চিড়িয়াখানার ঘটনা। কুকুর সাধারণত বাঘের খাদ্য। তবে এই চিড়িয়াখানার বাঘের খাঁচায় দিব্যি হেঁটেচলে বেড়াতে দেখা গিয়েছে একটি কুকুরকে! শুধু তাই নয়, কুকুরের গর্জনে বাঘের ‘হালুম’ও রীতিমতো জব্দ! নিজেদের খাঁচার মধ্যে কুকুরটিকে দেখে আক্রমণ করার বদলে আদুরে ভঙ্গিতে এগিয়ে যায় বাঘগুলিও।

1667799267 4

এর নেপথ্যে রয়েছে একটি কাহিনী। ওই কুকুরটিকে নিজেদের ‘মা’ মনে করে বাঘগুলি। চিনের ওই চিড়িয়াখানায় ছ’টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল এক বাঘিনী। তবে জন্ম দেওয়ার পরেই ছানাগুলিকে ফেলে পালিয়ে যায় তাদের প্রকৃত ‘মা’। এমন ঘটনা ঘটায় ব্যাঘ্রশাবকগুলিকে প্রাণে বাঁচানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ে চিড়িয়াখানার কর্মীদের কাছে। মায়ের দুধ না খেলে তাদের যে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না!

এমন সময়ে চিড়িয়াখানার কর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন, এই শাবকগুলি বড় না হওয়া অবধি একটি কুকুরের কাছে থাকবে তারা। পরিকল্পনা করা হয়েছিল, বাঘগুলি পূর্ণবয়স্ক হয়ে গেলেই কুকুরটিকে খাঁচার ভিতর থেকে বের করে আনা হবে। কারণ মাংসের স্বাদ পেয়ে কুকুরটিকে যদি মেরে ফেলে বাঘগুলি! তাই একটি গোল্ডেন রিট্রিভার প্রজাতির কুকুরকে বাঘের খাঁচায় রেখে দিলেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।

1667799287 5

তারপর সেই গোল্ডেন রিট্রিভারের কাছেই বড় হয়ে উঠেছে বাঘগুলি। শাবকগুলিকেও পরম যত্নে লালন পালন করেছিল সেই কুকুর মা। বাঘগুলি যখন বড় হল, তখন পরিকল্পনা অনুযায়ী কুকুরটিকে খাঁচা থেকে বের করে দেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। তবে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, ফল হয় ঠিক উল্টো। কুকুরটিকে সরিয়ে দেওয়ার ফলে বাঘগুলি বিমর্ষ হয়ে পড়ে।

মা’কে কাছে না পেয়ে বেশিরভাগ সময়েই মনখারাপ করে বসে থাকত বাঘগুলি। তাই এটি পরীক্ষা করার জন্য আবারও কুকুরটিকে খাঁচায় পাঠিয়ে দেন কর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গে বাঘদের মধ্যে বদল লক্ষ্য করা যায়। ‘মায়ের’ দেখা পেয়ে প্রচণ্ড খুশি হয় বাঘগুলি। বোঝা যায়, বাঘগুলির কাছে রক্তের চেয়ে মাতৃত্বের স্বাদ অনেক বেশি। গোল্ডেন রিট্রিভারটির সঙ্গে তাদের যে সম্পর্কের বাঁধন, তা বার বার তেমনটাই মনে করিয়ে দেয়।

Subhraroop

সম্পর্কিত খবর