বাংলা হান্ট ডেস্ক: সাফল্য যে কখন কার জন্যে অপেক্ষা করে রয়েছে তা কেউ জানেন না। তবে, প্রতিটি সফলতার পেছনেই থাকে এক অদম্য লড়াই, নিষ্ঠা এবং সাহস। আর এগুলির ওপর ভর করেই নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে তৈরি করে ফেলা যায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। পাশাপাশি, এই সাফল্যে উদ্বুদ্ধও হন সকলে। বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা আপনাদের কাছে এমন একটি প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যেখানে অবিশ্বাস্য ভাবে সফলতার শিখরে পৌঁছে গিয়েছেন কিছু লড়াকু মহিলা।
শুধু তাই নয়, আজ সারা দেশের মধ্যেই তাঁদের খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের তৈরি করা কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভারও অবাক করে দেবে যে কাউকেই। সাত মহিলার একসাথে পথচলার এই সম্মিলিত প্রয়াসই আজ সবার কাছে এক অনন্য উত্তরণের নজির গড়ে তুলেছে।
এই লড়াই শুরু হয় মুম্বাইতে। মূলত মুম্বাইয়ের গিরগাউমে বসবাসকারী এই মহিলারা আর পাঁচজন গৃহবধূর মতই সংসার সামলাতেন। স্বাভাবিকভাবেই, স্বামী-সন্তানরা কাজে এবং স্কুলে বেরিয়ে গেলে সারাটা দিন জুড়ে তাঁদের কাছে অনেকটা সময় থাকত। এই অবসর সময় কাটানোর জন্যই তাঁরা সম্মিলিত ভাবে শুরু করেন একটি ব্যবসা। যা বর্তমানে পরিণত হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তিতে।
মাত্র ৮০ টাকার বিনিময়ে শুরু করা এই ব্যবসা আজ গোটা দেশজুড়েই সুনাম অর্জন করেছে। ১৯৫৯ সালের ১৫ মার্চ যশোবন্ত বেন তাঁর ছয়জন সঙ্গী গৃহবধূকে সাথে নিয়ে, ধার করে কিনেছিলেন ডাল ও মশলা। সেগুলি দিয়েই তাঁরা এক্কেবারে প্রথম দিন তৈরি করেন ৮০ টি পাঁপড়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় সফর। প্রথমে স্থানীয় বাজারে তাঁদের পাঁপড় বিক্রি শুরু হলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার পরিধি। একটা সময়ে তাঁরা তাঁদের ঋণও শোধ করে দেন। এভাবেই শুরু হয় বিখ্যাত পাঁপড় কোম্পানি লিজ্জত পাঁপড়-এর ব্যবসা।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই ব্যবসা পুরোটাই চালিত হয় মহিলাদের দ্বারা। ব্যবসার একদম প্রথমে আটা জোগাড় করে সেই আটা ভাগ করে দেওয়া হত মহিলাদের মধ্যে। তারপর সেগুলি বাড়ি নিয়ে গিয়ে সেখানে পাঁপড় তৈরি করে পরের দিন জমা করতেন তাঁরা। তারপরে সেই পাঁপড় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হত।
কিন্তু, বর্তমানে লিজ্জতের রয়েছে ৬৩ টি কেন্দ্র এবং ৪০ টি মন্ডল। অর্থাৎ চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে পরিসরও। ব্যবসায় হওয়া লাভের পরিমান ভাগ করে দেওয়া হয় সমস্ত মহিলার মধ্যেই। এই প্রসঙ্গে লিজ্জত পাঁপড়ের প্রতিষ্ঠাতা যশবন্ত বেন জানিয়েছেন, গুণমানের সাথে কখনই আপস করা উচিত নয়। তাঁদের যদি মনে হয় পাঁপড়ের কোয়ালিটিতে কোনো সমস্যা আছে তাহলে তাঁরা পুরোটাই ফেলে দেন। এছাড়া, ব্যবসা সফল হওয়ার পিছনে তাঁদের “নো ক্রেডিট” এবং “নো লস” মন্ত্রের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ন বলে জানান তিনি। বর্তমানে লিজ্জত একটি পরিবারের নাম হয়ে উঠেছে। এখন এই কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ৩৩৪ কোটি টাকা।