বাংলা হান্ট ডেস্কঃ করোনায় দ্বিতীয় সুনামির ধাক্কা সামলাতে গিয়ে এখন রীতিমতো নাজেহাল দেশ। একদিকে যেমন বেহাল দশা চিকিৎসা ক্ষেত্রে, তেমনি বেহাল পরিস্থিতি সাধারণ মানুষেরও। এ পর্যন্ত দেশেই মারণ রোগের শিকার হয়েছেন প্রায় ২ লক্ষ ৬৬ হাজার মানুষ। মৃত্যুর পরিমাণ এতটাই যে অন্তিম সৎকার নিয়েও তৈরি হচ্ছে বড় সমস্যা। বিশেষত পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ গ্রামেই বহুদিন ধরে চলে আসছে জলপ্রবাহের কুপ্রথা। এক্ষেত্রে আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃতদেহ দাহ না করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। করোনায় মৃত্যুর পরিমাণ এতটাই বেশি যে দাহকার্য হয়ে উঠেছে যথেষ্ট সমস্যা। সেই সূত্র ধরেই, একের পর এক লাশ ভেসে আসছে গঙ্গা যমুনায়। অতীতের মহামারীর কোন ছবি যেন আবারো ফিরে আসছে বাস্তবে। যা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত মানুষ বিশেষত পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে সৎকাজের কাঠের দাম হয়ে উঠেছে আকাশছোঁয়া। দ্বিগুণেরও বেশি দাম দিয়ে তবেই পাওয়া যাচ্ছে কাঠ। সেই কারণেই জলে ভাসিয়ে দেওয়া কিংবা নদীর পাড়ে মৃতদেহ পুঁতে দেওয়া কি একমাত্র পথ বলে বেছে নিচ্ছেন প্রচুর গ্রামবাসী। উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা-যমুনা এর আগেও ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে মৃতদেহ। এবার গঙ্গার তীর জুড়ে উদ্ধার হলো পুঁতে রাখা প্রায় ২০০০ মৃতদেহ।
অনেক ক্ষেত্রেই উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও গ্রামের মানুষের হাতে পৌঁছাচ্ছে না সৎকার্যের জন্য সরকারি সাহায্য হিসেবে দেওয়া পাঁচ হাজার টাকা। নিয়ম রয়েছে কেবল কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই রিপোর্ট করানোর আগেই মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। অনেকক্ষেত্রে আবার রিপোর্ট আসছে মৃত্যুর বেশ কয়েকদিন পর। সেই কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন মানুষ। দায়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত কেউ বা মৃতদেহ ভাসিয়ে দিচ্ছেন গঙ্গায় কেউ বা পুঁতে দিচ্ছেন নদীর তীরে। যারা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের যে সাতাশটি জেলা দিয়ে বয়ে গিয়েছে গঙ্গা, সেই সমস্ত অঞ্চলেই নদীর তীরে কোভিড রোগে মৃতদের কবর দেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের উন্নাও, বিজনৌর, মেরঠ, মুজফ্ফরনগর, বুলন্দশহর, হাপুর, আলিগড়, বদায়ুঁ, শাহজাহানপুর, কনৌজ, কানপুর, রায়বরেলী, ফতেপুর, প্রয়াগরাজ, প্রতাপগর, মির্জাপুর, বারাণসী, গাজিপুর, বালিয়া কোন এলাকাই বাদ নেই। উন্নাওয়ে শুক্লাগঞ্জ এবং বক্সার ঘাঁটে পাওয়া গিয়েছে আটশোরও বেশি কবর। কনৌজের মহাদেবী গঙ্গা ঘাটেও কবর দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো মানুষকে। কানপুরের শেরশ্বর ঘাটে মাটির নিচে চাপা দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে চারশোরও বেশি মৃতদেহ। গাজীপুরে গঙ্গার তীরে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে প্রায় ২৮০ টি মৃতদেহ। এই পরিমান যে রীতিমতো আশঙ্কাজনক তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
একদিকে যেমন অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে পরিবেশ। পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামে গ্রামে। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন মানুষ, তেমনি এই দৃশ্য যে কতখানি মর্মান্তিক তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।যোগী রাজ্যে কেন সরকারি তরফে যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন? এই সমস্ত ক্ষেত্রে সরকারিভাবে মৃতদেহের সংখ্যা অডিট করার কথাও জানে জানানো হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসনের তরফে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেই কাজ কবে শুরু হবে। কোন কোন রাজ্যে যেকোনোভাবে মৃত্যুর ক্ষেত্রেই অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার জন্য সরকারি সাহায্য দেওয়া হয়। সারা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে যখন এই অবস্থা তখন প্রশাসনের তরফে কি এমন কোন ব্যবস্থা করা যায় না? অনেকেই সরকারি সাহায্য পাচ্ছেন না করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না দেখাতে পারার জন্য। সে ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সবার জন্যই কি সাহায্যের ব্যবস্থা করতে পারেনা সরকার, উঠছে প্রশ্ন।