বাংলা হান্ট ডেস্ক: সম্প্রতি সৌদি আরবে (Saudi Arabia) প্রত্নতাত্ত্বিক সার্ভে চলাকালীন খননের সময়ে প্রায় ৮,০০ বছরের পুরোনো একটি শহর আবিষ্কৃত হয়েছে। পাশাপাশি, পাওয়া গিয়েছে একটি প্রাচীন মন্দিরের খোঁজও। এমতাবস্থায়, সৌদি আরবের প্রাচীনতম নগরীতে ওই মন্দিরের সন্ধান পাওয়ার খবরটি দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে খননকার্য চলাকালীন ওই মন্দিরের খোঁজ পাওয়ার পাশাপাশি এমন অনেক জিনিস পাওয়া গেছে, যা প্রত্নতাত্ত্বিকদেরও অবাক করেছে। সৌদি আরবের মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে, সেখানকার রাজধানী রিয়াধের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত শহর আল-ফা (Al-Faw)-তে এই প্রাচীন মন্দিরটি পাওয়া গেছে।
খননে মিলল প্রাচীন মন্দির: এই প্রসঙ্গে আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সৌদি আরব এবং ফ্রান্সের প্রত্নতাত্ত্বিকদের যৌথ উদ্যোগে সৌদি আরব হেরিটেজ কমিশনের একটি দল আল-ফা শহরে খননের সময় মন্দিরটি আবিষ্কার করেছে। এই খননের সময় একটি প্রাচীন মানব বসতিও পাওয়া যায়। যা দেখে অনুমান করা হচ্ছে যে, সেখানে নিশ্চয়ই প্রচুর মানুষের বসবাস ছিল। প্রতিবেদন অনুসারে, এই বসতিগুলি নিওলিথিক যুগের হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মূলত ওই বসতিগুলির অবশিষ্টাংশগুলি সার্ভে, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান, লেজার স্ক্যানিং এবং গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডার ব্যবহার করে আবিষ্কৃত হয়েছে।
মন্দিরের কাছে পাওয়া যায় বেদীর ধ্বংসাবশেষ: প্রত্নতাত্ত্বিকরা ঐতিহাসিক বিষয়গুলিকে আবিষ্কার করতে ফটোগ্রাফি, ড্রোন সার্ভে, ভূ-ত্বকীয় জরিপ এবং লাইট ডিটেকশন প্রক্রিয়ার ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু, সেখানে মন্দিরের উপস্থিতি সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, জানা গিয়েছে ওই মন্দিরের কাছে বেদীর ধ্বংসাবশেষও পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায়, প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করছেন যে, সেখানে বসবাসকারী বাসিন্দারা হয়তো পুজো ছাড়াও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতেন।
এদিকে, আরব নিউজ অনুসারে জানা গিয়েছে, এই মন্দিরের বেশিরভাগ অংশ এখন হারিয়ে গেছে। তবে, মন্দিরের পাথরের অবশিষ্টাংশ এখনও বিদ্যমান। মূলত, তুওয়াইক পর্বতমালার প্রান্তে একটি বেদীর কিছু অংশ খুঁজে পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায়, এই মন্দিরটি আল-ফা শহরের বাসিন্দাদের উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হত বলে অনুমান করা হচ্ছে।
পাওয়া গিয়েছে ২,৮০৭ টি সমাধি: জানা গিয়েছে, খননকালে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা ওই স্থানে ২,৮০৭ টি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সমাধি খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলিকে মোট ছয়টি বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, সেখানে খোঁজ মিলেছে ধর্মীয় শিলালিপিরও। যেগুলির অধিকাংশের মধ্যে প্রাচীন দেবতাকে সম্বোধন করা হয়েছে। পাথরে এই দেবতার নাম লেখা রয়েছে “খল” হিসেবে।
বিলাসবহুল ভবনের সন্ধান পাওয়া গেছে: এর পাশাপাশি প্রত্নতাত্ত্বিকরা চারটি সৌধ ভবনের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন। সর্বোপরি, সেখানে শত শত ভূগর্ভস্থ জলাশয় পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সেখানে জল জমা করার পাশাপাশি সেগুলিকে কৃষিকাজ ছাড়াও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা হত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওয়াদি আল-দাওয়াসারের ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ওয়াদি আল-দাওয়াসার এবং নাজরান শহরগুলির সাথে সংযোগকারী আধুনিক সড়কে এই আবিষ্কারটি করা হয়েছে। সৌদি প্রত্নতাত্ত্বিক ডক্টর আব্দুল রহমান আল-আনসারির নেতৃত্বে আল-ফার বিস্তীর্ণ স্থানে কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছিল এই সার্ভে এবং খনন। যা গত ৪০ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে।