এলাকার দখলদারিকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার বীরভূমের পাঁড়ুই থানার অন্তর্গত শিমুলিয়া গ্রাম। দফায়,দফায় বোমাবাজি চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শূন্যে গুলি ছোঁড়ে পুলিশ।
নিজস্ব প্রতিনিধি,বোলপুর,বীরভূমঃ তৃনমূল বিজেপি সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠলো বীরভূমের পাঁড়ুই থানার অন্তর্গত সাত্তোরের শিমুলিয়া গ্রাম। দফায়,দফায় চলে বোমাবাজি। চলে মারধর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় নামানো হয়েছে কমব্যাট ফোর্স। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যদেরকে খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। যদিও এখনও এলাকায় মুড়ি-মুড়কির মতো বোমাবাজি চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,আজ সকাল থেকে এলাকা দখলদারিকে কেন্দ্র করে পাঁড়ুই থানার অন্তর্গত শিমুলিয়া গ্রাম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় তৃনমূল-বিজেপি সংঘর্ষ। যার জেরে ওই এলাকায় দফায় দফায় চলে বোমাবাজি। লাগিয়ে দেওয়া হয় ঘরে আগুন। ঘটনাটির খবর পেয়ে পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স এলে তাদের লক্ষ্য করে গ্রামের ধানক্ষেত পেরিয়ে জঙ্গল থেকে দুস্কৃতিরা ছোঁড়ে বোমা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ। এই ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে সাত্তোরের শিমুলিয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ভেড়ামাড়ি, বেলুটি ও পলসা গ্রামেও। সেখানেও একটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় একটা চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ওই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপও স্পষ্ট। এলাকায় যাতে আর কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই জন্য ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে কমব্যাট ফোর্স। টহলদারি করছে পুলিশ আধিকারিকেরা।
যদিও তৃণমূল সমস্ত অভিযোগটি অস্বীকার করে জানিয়েছে, ‘বিজেপি কর্মীরাই তাদের কর্মী মিলন শেখের উপর হামলা চালায় এবং তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।’
এইদিকে এই ঘটনার প্রসঙ্গে বীরভূমের বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল তৃনমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে আক্রমণ করে আমাদেরকে ফোনে জানান,“বীরভূমে যা কিছু ঘটছে তৃনমূলের দ্বারা করানো হচ্ছে,অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশে করানো হচ্ছে। যে অনুব্রত মণ্ডল পুলিশকে বোম মারতে বলে সেই অনুব্রত মণ্ডল সাধারণ মানুষকে বোম মারতে বলবে এটা কোন অস্বাভাবিক কথা নয়। এটা খুব স্বাভাবিক। অথএব তেঁনারা যদি মনে করছেন আমরা বোম,বারুদ,পিস্তল দিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে খুন সন্ত্রাস করে আমরা রাজনীতিতে টিকে থাকবো । আর সেই সমস্ত ব্যাপারকে মদত দিচ্ছে পুলিশ। এখানে বীরভূম জেলার একটা পাঁচ বছরের শিশুও জানতে পেরে গেছে এইগুলো কারা করছে। কারা সর্বদাই বীরভূম জেলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। আর পুলিশ যদি জেনেও না জানার ভান করে চলে আর উল্টো দিকে কী করে বিজেপির লোককে হ্যারাসমেন্ট করা যায়,মিথ্যা কেস দেওয়া যায় তারজন্য সর্বদাই প্রস্তুত। কাল সকালে মোটামুটি নয়টার এইদিক ওইদিক হবে যদি রণজিৎ ডোমকে তার বাড়ি শিমুলিয়া। তাকে যদি দেবগ্রাম বাস স্ট্যান্ডে না মারে তাহলে সেখানে অশান্তির বাতাবরণ সৃস্টি হয় না। আবার সন্ধ্যা বেলায় মিলন শেখের নেতৃত্বে সবুর আলির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।আর আজকের সকালে ভেড়ামাড়িতে মাংস আনতে গিয়েছিল শেখ লালচাঁদ। তার গ্রাম বেলুটি। ভেড়ামাড়িতে মাংস আনতে গিয়েছিল। সেখানে তিন,চারজন দুস্কৃতি ওই অনুব্রতর কথাতে এমন মার মেরেছে তাকে সকাল থেকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারিনি। এখন কী হলো জানিনা। এইসব ঘটনা তৃনমূল ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটাচ্ছে। আর সেইখানে পুলিশ তৃনমূলকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করছে।পুলিশকে একটাই বলবো আপনারা নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করুন। আর বীরভূম যাতে শান্তিতে থাকে সেই ব্যবস্থা আমরা করবো। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করবো ও রাজনৈতিকভাবে এর ব্যবস্থা করবো।”
এই ঘটনার প্রসঙ্গে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা বলেন,“খবর পেলাম সাত্তোরে আমাদের কর্মীদের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। কিছু কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। এবং কিছু কর্মী এখনো বাড়ি ছাড়া। আপনারা জানেন বেশ কিছুদিন আগে লাভপুরের এক জনসভা থেকে বীরভূমের তৃনমূলের জেলা সভাপতি প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন,যেখানে যেখানে পুলিশ পারবেনা, সেখানে সেখানে আমাদের তৃনমূল কর্মীরা গিয়ে এলাকা দখল করবে। তো সেটাই হচ্ছে। তার আদেশেই আজ পাঁড়ুই উত্তপ্ত। আর পুলিশ এবং তৃনমূলের যৌথ বাহিনী মিলে আমাদের কর্মীদেরকে ঘর ছাড়া করছে। পশ্চিমবঙ্গের আইন প্রশাসন বলে কিছুই নেই। আগে জানা যেত বীরভূম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জায়গা। কিন্তু এখন বোম ও বারুদের কারখানা হিসাবে পরিচিত বীরভূম।” এই ঘটনার জন্য তিনি পুলিশ ও তৃনমূলকেই দায়ী করেছেন।