বাংলা হান্ট ডেস্ক: ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের “লজ্জা” উপন্যাস। একই সাথে একাধিক ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটি। ১৯৯২ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার প্রভাব পড়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে। লজ্জা উপন্যাস সেই সময়ে সংখ্যালঘু হিন্দুদের জীবন নিয়ে লেখা। তসলিমা নাসরিনের লজ্জা উপন্যাস এ হিন্দুদের প্রতি হওয়া নির্যাতন মূল বিষয়বস্তু। লজ্জা উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর মৌলবাদী মুসলিমদের থেকে প্রাণের হুমকি পেয়ে তাকে শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে হয়। বাংলাদেশ সরকার তার এই উপন্যাসটির জন্য তসলিমা নাসরিনকে দীর্ঘ ২৫ বছরের নির্বাসন দেন।
এই ২৫ বছরের সংগ্রাম আমাদের সবার জানা। এই দীর্ঘ ২৫ বছর একজন লেখিকার কাছ থেকে তার কথা বলার স্বাধীনতা ভালভাবে বাঁচার স্বাধীনতা টুকু কেড়ে নেয়। একজন লেখিকা কে শুধুমাত্র তার নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার জন্য প্রাণের ভয়ে লুকিয়ে বেড়াতে হয় দেশ থেকে দেশে। দেশ একজন লেখিকাকে সামাজিক অবস্থা তুলে ধরার স্বাধীনতা দেয় না। একজন লেখিকা কে তার লেখার স্বাধীনতা দেয় না। প্রায় ২৬ বছর পর উপন্যাস নিয়ে নিজের ফেসবুক থেকে নিজের মতামত প্রকাশ করলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
“লজ্জা লিখেছি ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে। ছাপা হয়েছে ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। লজ্জায় আমি বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর যে অত্যাচার করে মুসলিম মৌলবাদিরা, হিন্দু বিদ্বেষীরা, সরকার যে হিন্দুদের ঘর বাড়ি মন্দির দোকান পাট ভেংগে ফেলা পুড়িয়ে ফেলা দেখেও, হিন্দুদের জমি জমা কেড়ে নেওয়া দেখেও, আতংকে হিন্দুদের দলে দলে দেশত্যাগ দেখেও হিন্দুদের যথেষ্ট নিরাপত্তা দেয় না, সেই সত্যিটাই লিখেছি। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লজ্জা তীব্র প্রতিবাদ। আমি যেমন বাংলাদেশের লেখক বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর পাশে দাড়িয়েছি, ভারতের যারা আমার মতোই নিজের দেশের সংখ্যালঘুর বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ায়, তারা কিন্তু লজ্জা লেখার জন্য হেন গালি নেই, আমাকে দেয়নি। আমি নাকি বিজেপির লোক, বিজেপির টাকা খেয়ে লজ্জা লিখেছি, আমি নাকি সাম্প্রদায়িক, হিন্দুত্ববাদি, আমি নাকি মুসলিম বিদ্বেষী। এই হলো তাদের বিচার। ভারতবর্ষে যাদের প্রগতিশীল, বামপন্থী, উদারনীতিক, অসাম্প্রদায়িক, বুদ্ধিজীবী বলে ডাকা হয় তারাই আমাকে গালি দেয় মানবতার পক্ষে লেখা লজ্জা বইটির জন্য। ২৬ বছর ধরে গালি দিচ্ছে। একঘরে করে রেখেছে আমাকে। রাজ্য থেকে আমাকে তাড়ানোতে খুশি। দেশ থেকে তাড়ানো হোক, তাও চায় তারা। সেক্যুলার সেক্যুলার বলে বলে মুখে ফেনা তোলে, অথচ ওদের যতটুকু দেখেছি পড়েছি জেনেছি, ওরা কেউই আমার চেয়ে বেশি সেক্যুলার নয়, আমার চেয়ে বেশি ধর্ম মুক্ত নয়, আমার চেয়ে বেশি উদারনীতিক নয়। অনেকে তো নিয়মিত পুজো আচ্চা করেও বুদ্ধিজীবীর খাতায় নাম লেখানোর জন্য হিন্দুত্ববাদীদের গালি দিয়ে সেক্যুলার সাজে।”