বাংলাহান্ট ডেস্কঃ করোনা (COVID-19) পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দেশে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। লকডাউনের সময় চিকিৎসা বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। লকডাউনের সময় কাজ বন্ধ রয়েছে বহু মানুষের। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দেশের এক শ্রেণীর মানুষ। বিশেষত দেশের দরিদ্র গবির শ্রেণীর মানুষ যারা দিন আনে দিন খায়, তারা এই মুহুর্তে প্রবল সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাঁদের শুধু একটাই প্রশ্ন আর কতদিন চলবে এই লকডাউন অবস্থা? আমরা কবে কাজে গিয়ে দুটো পয়সা উপার্জন করতে পারব?
সমাজের এই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সমাজের বিভিন্ন নেতা থেকে শুরু করে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। এই পরিস্থিতিতে নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেন জানালেন, ‘এই লকডাউনের সময় সাধারণ মানুষের কথা শোনাটা খুবই জরুরি। তারা কি চাইছে এখন সেটাও দেখা উচিত। সমাজের আসল চেহারাটা সকলের জানা থাকেল, তবে করোনা মোকাবিলার পথ অনেক সহজ হবে। কিছু মানুষ আছেন এই সময় যারা দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। তাই তাঁদের কথা মাথায় রেখে প্রথমে, সরকারী গুদাম মজুত সমস্ত খাদ্য শস্য অর্থাৎ চাল–ডাল–গম সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিলি করা হোক। যাতে করে এই কর্মহীন মানুষেরা এই সংকটের সময় যাতে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে’।
অমর্ত্য সেন আরও জানান, ‘এখানে জনসাধারণের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করা হয় না। তবে দেশের কোনোরকম সমস্যায় কিন্তু প্রথমেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন গরিব মানুষেরাই। কিন্তু এর কোন সঠিক প্রতিকার আজ অবধি পাওয়া সম্ভব হয়নি। সেইজন্য এই মহামারির পরিস্থিততে মানুষকে একে অপরের জন্য আওয়াজ তুলতে হবে। তবেই সরকারের কাছে সেই সব দরিদ্র মানুষদের বিষয়টা পৌছাবে’।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে যেমন লকডাউন জরুরী, তেমনই সমাজের এই সকল মানুষদের কথা শোনাও জরুরী সরকারের কাছে। লকদাউনের ফলে দেশের এক বিরাট অংশের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে, অনাহারে দিন কাটাবে, দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে সেটাও ভাবতে হবে সরকারকে। সেই কারণে এই সমস্যার প্রতিকার সরকারকেই করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রবল সংকটের মধ্যেও আমেরিকার সরকার বড় অঙ্কের আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে সাধারণ মানুষের দু’বেলার খাবারের বন্দোবস্ত করেছে। ভারত সরকারকেও সেই বিষয়টা ভাবতে হবে। সরকারের ফুড কর্পোরেশনের গুদামে এখন প্রায় ছ’কোটি টনের কাছাকাছি চাল–গম পড়ে রয়েছে। এই সময় এই খাদ্য শস্য সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া উচিত। বিশেষত যে শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে কাজের প্রয়োজনে গিয়ে আটকা পড়েছেন, তাঁদের সমস্যা এখন সবথেকে বেশি। তাঁদের কাছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সবকিছুরই এখন অভাব দেখা দিয়েছে। তাই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারকে একবার সেই সকল শ্রেণীর মানুষের কথা ভাবতে হবে, যারা এই সংকটের মুহুর্তে অনাহার, অভাবে দিন কাটাচ্ছে’।