স্মরণ করুন ভারতীয় বাঙালি যোগসাধক রামকৃষ্ণ পরমহংসকে, মনে পাবেন বল, বাড়বে আরোগ্য শক্তি

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ১৮৩৬ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমায় অবস্থিত কামারপুকুর গ্রামে এক দরিদ্র বৈষ্ণব ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব (Ramakrishna Paramahamsa Deb)। তাঁর পূর্ব নাম ছিল গদাধর চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তীতে তিনি এক মহাপুরুষ নামে ক্ষ্যাতিলাভ করেন। দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে তিনি পৌরোহিত্য করতেন। তারপর তিনি ভারতীয় শক্তিবাদের প্রভাবে তিনি মা কালীর আরাধনা শুরু করেন। তার জীবনে প্রথম গুরু ছিলেন তন্ত্র ও বৈষ্ণবীয় ভক্তিতত্ত্বজ্ঞা এক সাধিকা।

Ramkrishna

 

পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক গ্রামীণ উপভাষায় ছোটো ছোটো গল্পের মাধ্যমে তিনি জনসাধারণের মধ্যে ক্ষিক্ষ্রা প্রসার ঘটাতেন। প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি অশিক্ষিত ছিলেন। কিন্তু তা অসাধারণ জ্ঞান এবং দিব্যদৃষ্টির দ্বারা তিনি বাঙালি বিদ্বজ্জন সমাজ ও শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের সম্ভ্রম অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৮৭০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে ধীরে ধীরে তিনি পাশ্চাত্যশিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের কাছে গুরুদেবের ন্যায় হয়ে ওঠেন। তাঁর মৃত্যুর পর শিষ্যরা তাঁর এই কাজ চালিয়ে যান। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে প্রধান ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।

80072

শ্রীরামকৃষ্ণ পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং মা চন্দ্রমণি দেবীর চতুর্থ ও শেষ সন্তান ছিলনে। তিনি শৈশবে গদাই নামে পরিচিত ছিলেন। অঙ্কন ও মাটির প্রতিমা নির্মাণে তিনি অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। তিনি গানবাজনা, কতকথা এবং ধর্মীয় বিধয়ে পারদর্শী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে পুরোহিত হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর পূজার ধরণ এমনই ছিল যে কামারপুকুরে গুজব রটে যায় যে, দক্ষিণেশ্বরে অতিরিক্ত সাধনার ফলে তিনি পাগল হয়ে গেছেন। তখন তাঁর  মা ও মধ্যমাগ্রজ রামেশ্বর ঠিক করেন তাঁর বিবাহ দিলে তিনি ঠিক হয়ে যাবেন। ১৮৫৯ সালে বছর ৫-এর সারদা দেবীর সহিত তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৩।

Mojib 1522983245

বিবাহের পর ১৮৬০ সালের ডিসেম্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা দেবীকে ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন। তারপর বহুদিন তাঁদের আর দেখা সাক্ষাত হয়নি। বিবাহের পর শ্রীরামকৃষ্ণ কলকাতায় ফিরে এসে পুণরায় মন্দিরের কাজে যোগ দেন। তখন থেকে তিনি অধ্যাত্ম সাধনায় মত্ত হলেন। ব্রাহ্মণের জাত্যভিমান মুছে ফেলতে জন্য তিনি নিম্নবর্ণীয়দের হাতে খাদ্যগ্রহণ, অন্ত্যজ পারিয়াদের সেবা করতে থাকেন।

1200px Ramakrishna

তিনি স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রাকে মাটির ঢেলার সঙ্গে মিশিয়ে বলতে শুরু করেন “টাকা মাটি, মাটি টাকা”। এবং অর্থকে গঙ্গায় ফেলে দিতেন। তাঁর এই কর্মকান্ডের জেরে লোকে মনে করতে থাকেন, সত্যিই তিনি পাগল হয়ে গেছেন। কথিত আছে, এই পরিস্থিতিতেও তাঁর গুমন্ত অবস্থায় তাঁকে মুদ্রা স্পর্শ করালে, তিনি সংকুচিত হয়ে যেতেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম সহ বিভিন্ন ধর্মমত অধ্যায়ন করে জ্ঞান লাভ করেছিলেন যে সব ঈশ্বরই সমান। তাই তিনি বলতেন, “যত্র জীব তত্র শিব” অর্থাৎ, ‘যেখানেই জীবন, সেখানেই শিবের অধিষ্ঠান’। বর্তমানে তাঁর এই ধর্মমতে প্রচুর শিষ্য এই দীক্ষা গ্রহণ করেছেন।


Smita Hari

সম্পর্কিত খবর