বাংলাহান্ট ডেস্ক: এ যেন ঠিক কুয়োর ব্যাঙ। যার বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনও যোগাযোগই নেই। নিজেকে নিয়ে, নিজের জগৎকে নিয়েই ব্যস্ত থাকত সে। এই দম্পতির (couple) গল্পও যেন একই রকম। দীর্ঘদিন সমুদ্রে ঘুরে বেরিয়েছেন তারা, মাটির পৃথিবীর থেকে দূরে, বিচ্ছিন্ন হয়ে। এমনকি জানতেনই না করোনা (corona) ভাইরাসের দাপটের কথা। হুঁশ ফিরল ডাঙায় এসে।
একে গল্প না বলে বরং বাস্তব বলাই ভাল। ইলিনা মানিঘেট্টি ও রায়ান অববোর্ন, দুজনে স্বামী স্ত্রী। ব্রিটেনের ম্যাঞ্চেস্টারের বাসিন্দা তারা। অন্যান্যদের মতোই চাকুরিজীবী ছিলেন তারাও। কিন্তু প্রতিদিনের একঘেয়ে জীবনে হাঁপিয়ে ওঠেন একসময়। ঠিক করেন চাকরি ছেড়ে দেবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। চাকরি ছেড়ে স্বামী স্ত্রীতে বেড়িয়ে পড়েন বিশ্ব ভ্রমণে। তাও আবার জলপথে, সঙ্গী একটি নৌকা।
পরিবারকে সাফ জানিয়ে দেন তারা, যোগাযোগ রাখা যাবে কিন্তু কোনও খারাপ খবর দেওয়া চলবে না। ঘোরার মজাটা মাটি করতে চান না তারা। এই ঘটনা ২০১৭র। চাকরি ছাড়ার পর থেকেই সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছেন ইলিনা ও রায়ান। গত মাসে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ থেকে ক্যারেবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। টানা ২৫ দিন পর ক্যারেবিয়ান সমুদ্রের এক দ্বীপে পৌঁছান ওই দম্পতি।
এতটা অবধি ঠিকই ছিল। খটকাটা লাগল বন্দর সিল করা দেখে। তখনই তারা জানতে পারলেন এতদিনে কি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গিয়েছে স্থলে। সেলিং কিটিওয়েক নামে একটি ব্লগে লেখালেখি করেন ইলিনা ও রায়ান। সেখানেই তারা তাদের অভিজ্ঞতার বিষয়ে লেখেন, ‘বন্দরে এসে আমরা জানতে পারলাম বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মারাত্মক রোগ। প্রায় সব দেশেই চলছে লকডাউন। সব মানুষ ঘরবন্দি।’
এক বিদেশি সংবাদপত্রকে ইলিনা জানান, ফেব্রুয়ারিতে তারা শুনেছিলেন চিনে এক ভাইরাসের সম্পর্কে। কিন্তু ভেবেছিলেন যতদিনে ক্যারেবিয়ান পৌঁছাবেন ততদিনে বিপদ কেটে যাবে। ক্যারেবিয়ান দ্বীপের বন্দরে ঢুকতে না দেওয়ায় নৌকা ঘুরিয়ে তারা চলে যান গ্রেনাডার দিকে। সেখানে পান ইন্টারনেট কানেকশন। বিস্তারিত খবর পান তখনই।
ইলিনা জানান, সেন্ট ভিনসেন্ট দ্বীপে তার এক বান্ধবী থাকে। তারা যাচ্ছিলেন সেখানেই। বন্দরে পৌঁছানোর ১০ ঘন্টা আগে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা গেলে তিনি জানান ওই দম্পতিকে বন্দরে ঢুকতে দেবে না কারন ইলিনা ইতালির নাগরিক। এরপর জিপিএসে ট্রাভেল হিস্ট্রি দেখিয়ে তারা প্রমাণ করেন দীর্ঘদিন ইতালির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই তাদের। তারপর বন্দরে ঢোকার অনুমতি পান তারা। এখন ভিনসেন্ট দ্বীপেই রয়েছেন ইলিনা ও রায়ান।