বাংলাহান্ট ডেস্ক: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে (election) অন্যতম চমক হল তারকা প্রার্থী। ভোটের আগে দলে দলে টলি ও টেলি তারকারা রাজনীতির আঙিনায় পা রেখেছেন। তৃণমূল, বিজেপি দুই দলেই যোগ দিয়েছেন খ্যাতনামা অভিনেতা অভিনেত্রীরা। রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা হলেও নির্বাচনে লড়ার টিকিট পেয়ে গিয়েছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (sayantika banerjee), কৌশানি মুখার্জি (koushani mukherjee), পায়েল সরকাররা (payel sarkar)।
ইতিমধ্যেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বেশ কয়েকজন তারকা প্রার্থী। নিয়ম মতো হলফনামায় সম্পত্তির খতিয়ানও দাখিল করেছেন তাঁরা। আর সেসব প্রকাশ্যে আসতেই চোখ কপালে উঠেছে সকলের। কারোর ঋণের অঙ্ক ছাড়িয়েছে কোটি টাকা। আবার কারোর সম্পত্তির পরিমাণ ও গাড়ির বহর দেখে হতবাক সবাই।
দীর্ঘদিন টলিউডের কোনো ছবিতে দেখা যায়নি সায়ন্তিকাকে। ঝুলিতে রয়েছেও মাত্র গুটিকয়েক ছবি। এহেন সায়ন্তিকা হঠাৎ করেই রাজনীতিতে যোগ দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সকলকে। বাঁকুড়া থেকে তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়ছেন অভিনেত্রী। ইতিমধ্যেই ঢাক ঢোল বাজিয়ে নাচতে নাচতে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছেন সায়ন্তিকা। নিয়ম মেনে নিজের সম্পত্তির হলফনামাও জমা দিয়েছেন তিনি। আর তা প্রকাশ্যে আসতেই জোর বিষম খাওয়ার দশা সকলের।
বাজারে বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষাধিক টাকা ঋণ রয়েছে সায়ন্তিকার। হাতে নগদ টাকার পরিমাণ মাত্র ৪৩ হাজার ১২৭ টাকা। সল্টলেকের লাবণী এস্টেটে থাকেন সায়ন্তিকা। মোট আটটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁর। কিন্তু এর মধ্যে ৪টি ব্যাঙ্কে কোনো টাকাই নেই। বাকি ব্যাঙ্কে যা রয়েছে তার পরিমাণও চোখে পড়ার মতো কম।
বন্ধন ব্যাঙ্কের যৌথ অ্যাকাউন্টে ৩৪ হাজার ৭৯৬ টাকা রয়েছে সায়ন্তিকার। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে রয়েছে ১ হাজার ৩৮৯ টাকা। অপর একটি ব্যাঙ্কে পড়ে রয়েছে মাত্র এক টাকা। অথচ তিনিই কয়েক বছর আগে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ কেনেন যার দাম প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা।
এই গাড়ি কিনতে গিয়ে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে ১৯ লক্ষ ৯১ হাজার ৮৯১ টাকা গাড়ি ঋণ নিয়েছেন সায়ন্তিকা। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকে ১৪ লক্ষ ৯৭ হাজার ১৮ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ নিয়েছেন। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ডে বাকি রয়েছে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩৯৭ টাকা। এমনকি ৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকার জিএসটিও জমা দেওয়া বাকি সায়ন্তিকার। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সায়ন্তিকার মোট আয় ১১ লক্ষ ১৫ হাজার ৬০ টাকা।
কম যান না তৃণমূলের আরেক তারকা প্রার্থী কৌশানি মুখার্জি। কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে সবুজ শিবিরের হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। কৌশানির জমা দেওয়া হলফনামা থেকে জানা গিয়েছে মোট ৬৩ লক্ষ ২১ হাজার ১১৩ টাকার মালকিন তিনি। তিনটি ব্যাঙ্কে রয়েছে তাঁর অ্যাটাউন্ট। এর মধ্যে রয়েছে এইচডিএফসি ও বন্ধন ব্যাঙ্ক। ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার একটি ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে কৌশানির নামে।
মোট ৫৬ গ্রাম সোনা রয়েছে অভিনেত্রীর যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা। এছাড়া ৩৬ লক্ষ টাকার একটি বিএমডব্লিউ গাড়িও রয়েছে কৌশানির। এ তো গেল সম্পত্তির পরিমাণ। কিন্তু অভিনেত্রীর ঋণের পরিমাণ দেখে মাথায় হাত অনেকরই। জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কে প্রায় ৮১ লক্ষ টাকার ঋণ রয়েছে কৌশানির।
অনেকদিন আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী। অন্যদের মতো আনকোরা নন তিনি। এবার পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। তাঁর পেশ করা হলফনামা থেকে জানা গিয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তাঁর মোট আয় ৫২ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৫০ টাকা।
হাতে নগদ দেড় লক্ষ টাকা রয়েছে সোহমের। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ ৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৫৮ টাকা, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কে রয়েছে ২ লক্ষ ৪ হাজার ৭৫২ টাকা, এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে ৪৫ লক্ষ ৪৮ হাজার ও স্টেট ব্যাঙ্কে ১০ হাজার টাকা রয়েছে সোহমের।
এছাড়া কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও পিপিএফ অ্যাকাউন্টেও রয়েছে টাকা। পাশাপাশি চারটি জীবনবিমাও করিয়ে রেখেছেন সোহম। তিন তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে অভিনেতার। যার মধ্যে একটি রেঞ্জ রোভার গাড়ির দাম ৮৫ লক্ষ টাকা। গাড়ি গয়না, জমানো টাকা মিলিয়ে সোহমের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৮১ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা। প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার ঋণ রয়েথে সোহমের।
অপরদিকে বিজেপির তারকা প্রার্থী পায়েল সরকারের পেশ করা হলফনামা থেকে জানা গিয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তাঁর মোট আয় ছিল ১৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৩৪৭ টাকা। দুটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে রয়েছে তাঁর অ্যাকাউন্ট। একটিতে রয়েছে ৫০ হাজার টাকা ও অপরটিতে রয়েছে ৩ হাজার ৩৭৫ টাকা। অন্য আরেকটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ১১ হাজার টাকা রয়েছে পায়েলের।
মোট ৫৬ গ্রাম সোনার মালকিন পায়েল। আরবানা কমপ্লেক্সে ১৬ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ও ১৬ লক্ষ টাকার একটি বিলাসবহুল অডি গাড়ি রয়েছে অভিনেত্রীর।