বাংলাহান্ট ডেস্কঃ করোনা রোগীর পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ের পর, সেই রোগী মারা গেলে সৎকারের ক্ষেত্রেও এক নতুন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে ধাপায় নিয়ে যেতেই গাড়ি ভাড়া লাগছে ১০ হাজার টাকা, যা অন্য সময় ৫ হাজার টাকা লাগে। এরপর একসঙ্গে দুতিনটে দেহ দাহ করা হচ্ছে। যদি পৃথকভাবে দাহ করার কথা বলা হয়, সেক্ষেত্রে আলাদা আরও ৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে। মাঝে আবার পুরকর্মী দিতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা।
এমনই ঘটনা ঘটছে খোদ কলকাতাতেই। একদিকে করোনা আবহে রোগীর পরিবারের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। একদিকে অক্সিজেন সংকট অন্যদিকে, বেডের অমিল। সবকিছু পেরিয়ে যখন চিকিৎসার পর রোগী মারা যাচ্ছেন, তখন তাঁকে নিয়ে আরও এক সমস্যা। সৎকারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঝোক্কি পোহাতে হচ্ছে পরিবারজনদের।
বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা ৮৪ বছর বয়সী আশিস মিত্র মূত্রনালির সংক্রমণের কারণে গড়িয়া পঞ্চসায়রের কাছে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ৭ দিন পর তাঁকে অক্সিজেন ও নেবুলাইজার দিয়ে ছেড়ে দিলে, রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৭৫-এ নেমে যায়। এরপর ওই হাসপাতালে বেড না মেলায়, বেহালার ছোট নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে পরদিন তিনি মারা যান।
হাসপাতাল পর্ব শেষে শুরু হয়, সৎকার পর্ব। মৃত বৃদ্ধার মেয়ে মিলি জানান, ‘ধাপায় দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য নার্সিংহোমের শববাহী গাড়ি নিল ১০ হাজার টাকা। এরপর ধাপায় ঢোকার জন্য পুরকর্মীরা নিলেন ৩ হাজার টাকা। তারপর সবকিছু পেরিয়ে সৎকারের সময় দেখলাম দু তিনজনের দেহ একসঙ্গে পোড়ানো হচ্ছে। সঠিক অস্থিভস্ম পাওয়ার জন্য, এককভাবে দাহ করার কথা বলতেই নিল ৪ হাজার টাকা। তবে মুখাগ্নির জন্য আলাদা করে কোন টাকা অবশ্য আর নেয়নি। এইভাবে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে প্রায় ৮ ঘণ্টা বাদে সমস্ত কাজ সেরে বাড়ি ফিরলাম। অন্যদের থেকে তো আরো বেশি নেওয়া হচ্ছে’।
পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষ অফিসার এমনকি খোদ পুর কমিশনার বিনোদ কুমারের কাছে এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন মিলি মিত্র সোম। এবিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও, পুরসভার শীর্ষ অফিসারদের একাংশ জানিয়েছেন- সকলের সামনেই স্বজনহারাদের দিনের পর দিন এভাবে ‘ব্ল্যাকমেল’ করা হচ্ছে। এর পেছনে বড় মাথা না থাকলে, ডোম বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের পক্ষ একাজ করা সম্ভব নয়। ধাপায় দেহ দাহ করার আড়ালে এই লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা চললেও, স্বেচ্ছাসেবী শববাহী গাড়ির চালক ও খালাসি, এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিযুক্ত পুরকর্মীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়াই হয়নি।