বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মিটে গিয়েছে একুশের মহারণ। নির্বাচনে দুর্দান্ত ফলাফল করে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ২১৩ আসনে ভোটে জিতলেও যে তারপরেই শুরু হয়েছে দলের অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা। আর সেই সূত্র ধরেই, অনেকক্ষেত্রেই উঠছে বিধানসভা নির্বাচনে নেতাদের নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ। নির্বাচনের সময় দল বিরোধী কাজ কর্মের জন্য এর আগে মঙ্গলবারই ৫ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বহিষ্কৃতরা হলেন কালিয়াচক-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি টিঙ্কু রহমান বিশ্বাস, জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ চম্পা মণ্ডল, দ্বিজেন মণ্ডল, হামিদপুর অঞ্চলের প্রধান জুলেখা বিবি এবং গঙ্গাপ্রসাদ অঞ্চলের প্রধান আমিনুল ইসলাম।
মালদহের কালিয়াচক ব্লগ-২ এর তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি করে, নির্বাচনে টাকা নিয়ে অন্য দলের হয়ে কাজ করেছেন এই পাঁচ নেতা নেত্রী। আর সেই কারণেই তাদের বিরুদ্ধে এই বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। শুধু মালদহ নয়, খেজুরির প্রাক্তন বিধায়ক রনজিত মন্ডল এবং জেলা পরিষদের কর্মদক্ষ আনন্দময় অধিকারীকেও বহিষ্কার করেন দলের জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র। বিজেপির হয়ে নির্বাচনে কাজ করার অভিযোগ উঠেছিল এই দুই নেতার বিরুদ্ধে। এবার ফের বড় সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হল দমদমের দাপুটে নেতা প্রবীর পালকে।
দক্ষিন দমদম পুরসভার প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য প্রবীর পাল এলাকায় বেশ দাপুটে নেতা বলেই পরিচিত। শুধু তাই নয়, শাসকদলের ঘনিষ্ঠ তিনি। কিন্তু একুশের হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে উঠলো নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ। দমদম এলাকার দুটি ওয়ার্ডের দায়িত্ব ছিল প্রবীর বাবুর কাঁধে। ফল প্রকাশের পর জানা যায়, দুই ওয়ার্ডেই লিড কমেছে তৃণমূলের। একটিতে ৫০০ ভোট এবং অন্যটিতে ৩০০ ভোট কম পেয়েছে তৃণমূল। এই ঘটনা নজরে আসার পরেই প্রবীর পালকে ডেকে পাঠায় শাসক দল। ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কথা বলে আগামী দিনে তৃণমূলের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বানও জানানো হয় তাকে। কিন্তু বিধায়ক ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেন প্রবীর বাবু। এরপর এই দলের তরফে শোকজ করা হয় তাকে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, সেই শোকজের অত্যন্ত দায়সারা গোছের উত্তর দিয়েছেন প্রবীর বাবু। আর এই কারনেই, সুব্রত বক্সি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী দলীয় তদন্তে দেখা গিয়েছে, নির্বাচনের কিছু আগে বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশ তৈরি হয় প্রবীর বাবুর। আর সেই কারণেই দমদমের ওই দুটি ওয়ার্ডে একেবারেই কাজ করেননি এই দাপুটে নেতা। আর তার ফলশ্রুতি হিসেবে লিড কমেছে শাসকদলের। বহিষ্কার নিয়ে অবশ্য এখনো কোনো মন্তব্য করেননি দমদমের এই দাপুটে নেতা। তবে নির্বাচনে দলের ভিতর থেকে অনেকেই যে অন্য দলের হয়ে কাজ করেছেন যত দিন যাচ্ছে ততই তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যদিও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এই মুহূর্তে ক্ষমতায় ফিরেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে দলের মধ্যে শুদ্ধিকরণ শুরু থেকেই দরকার। আর সেই কারণেই তৈরি করা হচ্ছে প্রত্যেকের রিপোর্ট কার্ড।