বাংলা হান্ট ডেস্কঃ হিন্দু-মুসলিম, শিখ, ইসাই সমস্ত ধর্মের উপরেই রয়েছে মানব ধর্ম। আর এই মানব ধর্মের ডাকেই ধর্ম জাতি বর্ণ ভুলে গিয়ে আসে মানুষ। কিছুদিন আগে এমনই এক ছবি দেখা গিয়েছিল কেরালায়। করোনা আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী মুসলিম রোগীর কানে আল্লাহর নাম তথা কলমা পাঠ করেছিলেন হিন্দু চিকিৎসক রেখা কৃষ্ণান। মহিলাকে অসহায় মৃত্যুর পথে এগিয়ে যেতে দেখে হিন্দু হয়েও থেমে থাকতে পারেননি চিকিৎসক। রোগীকে বাঁচাতে পারেননি তিনি, তবে মৃত্যুকালে তাকে চিরশান্তি দিতে নিজের ধর্মকে দূরে সরিয়ে রেখে মানব ধর্মকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। এবার যেন তারই প্রত্যুত্তর দিল ইসলাম সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মানুষও। সহায় সম্বলহীন হৃদরোগে আক্রান্ত মৃত মহিলাকে সৎকার করতে এগিয়ে এলো তারা।
ঘটনাটি ঘটেছে, চুঁচুড়ার মোগলপুরা এলাকায়। শুক্রবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চুঁচুড়া হাসপাতালে ভর্তি হন এলাকারই বাসিন্দা পুতুল চৌধুরী। বছর পয়তাল্লিশের ওই মহিলার সহায় বলতে একমাত্র বৃদ্ধা মা। তাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়েছিলেন পাড়ার কয়েকজন যুবকই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাঁচানো যায়নি তাকে। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও ক্রমাগত শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে পুতুলের। অবশেষে রবিবার লড়াইয়ে হার মেনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এখন এমনিতেই রীতিমতো ভয় তৈরি হয়েছে মৃতদেহের সৎকার নিয়ে। বহু অমানবিক দৃশ্য আমাদের চোখের সামনে উঠে আসছে বারবার। অসহায় ভাবে কেউ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিচ্ছে মৃতদেহ। কেউ বা লোকের অগোচরে নদীর ধারে মৃতদেহ কবর দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এমতাবস্থায় এগিয়ে এলো বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু যুবক। পুতুল চৌধুরীর শেষ সৎকারের ব্যবস্থা করলেন তারাই।
হিন্দু মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে রীতিমতো উত্তাল ছিল একুশের নির্বাচন। কিন্তু মানুষের প্রথম পরিচয় যে মানুষ তা আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন শেখ রুস্তম, শেখ কালাম, শেখ আবেদরা। নিজেদের টাকাতেই সৎকারের জন্য খাট, ফুলের মালা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনেন তারা। এরপর পুতুলের দেহ কাঁধে করে বয়েও নিয়ে যান শ্মশানে। একদিকে যখন আমাদের ভারতবর্ষে দেখা যাচ্ছে অমানবিক দাঙ্গার ছবি। তখনই পাশাপাশি এই ছবি আবারও মানুষকে মানুষ হবার কথা মনে করিয়ে দিল। রুস্তম বলেন, “এটাই তো মানবধর্ম। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাত-ধর্ম বিচার করি না। এক জন হিন্দু মহিলা অসুস্থ হয়েছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর তাঁর মৃত্যু হল। তাঁর দেহ সৎকারের বন্দোবস্ত করলাম। মৃতার পরিবারের আত্মীয়রা থাকলে তাঁরা নিশ্চয়ই সে ব্যবস্থা করতেন।”
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুবক দলের এই কাজে মুক্ত সকলেই। ইতিমধ্যেই পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এই ঘটনার কথা। এর আগেও পশ্চিম মেদিনীপুরের মামুদপুর অঞ্চলে
এই করোনা আবহে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধর। সেবারও এগিয়ে আসেননি স্বজন প্রতিবেশীরা। এমনকি ঘরেই পড়েছিল মৃতদেহ। কিন্তু করোনার ভয়ে হিন্দু প্রতিবেশীরা এগিয়ে না আসলেও এগিয়ে এসেছিলেন কিছু মুসলিম যুবক। ওই বৃদ্ধ দেহসৎকারের সমস্ত রকম ব্যবস্থা করেছিলেন তারা। এ ধরনের ঘটনায় আমাদের আবারো মনে করিয়ে দেয় নজরুলের সেই অমোঘ কবিতা, “মোরা একই বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান”
‘ভারত আজ পর্যন্ত অলিম্পিকে সোনা পায়নি …’ ভরা মঞ্চে বেফাঁস মমতা