বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গতকালই ওড়িশায় আছড়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকা তো বটেই, সাথে সাথেই ভারী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরও। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং দুই মেদিনীপুরে রীতিমতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষ। ভেঙ্গে গিয়েছে সমুদ্র বাঁধ, বাঁধ ভেঙেছে বিদ্যাধরী, মুড়িগঙ্গা, রূপনারায়ন ও অন্যান্য নদীরও। যার ফলে একদিকে যেমন তমলুক, কোশিয়ারি, ঝাড়গাম, খেজুরিতে রীতিমতো সংকটের মুখে পড়েছে মানুষ , তেমনি অন্যদিকে গোসাবা, সাগর, ক্যানিং প্রভৃতি বিভিন্ন অঞ্চলে মারাত্মক ক্ষতি করেছে এই ঝড়। হুগলি হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়েও টানা ভারী বৃষ্টি হয়েছে গতকাল থেকে। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ থেকে সৃষ্ট ইয়াসের কবলে পড়ে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় এক কোটি মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে রিলিফ ক্যাম্প। ত্রাণের জন্য ইতিমধ্যেই খরচ করা হয়েছে প্রায় দশ কোটি টাকা। ১২৪ টিরও বেশী বাঁধ ভেঙেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় তিন লাখ বাড়ি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাত প্রায় এগারোটা অবধি রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে ইয়াস। যদিও এখন এই ঝড়ের গতি কিছুটা কমেছে বলেই দাবি করছেন আবহাওয়াবিদরা। ক্রমশ ওড়িশা হয়ে তা সরে যাচ্ছে নিকটবর্তী ঝাড়খণ্ডের দিকে। গতকাল এই মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল থেকে বেঁচে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু তা হলেও ভরা কোটালের কারণে এর প্রভাব হয়ে উঠেছে আরো মারাত্মক। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবারও রয়েছে ভরা কোটাল। আর সেই কারনে আজও বাড়তে পারে গঙ্গার জল স্তর। দুপুর আড়াইটের দিকে এই জলস্তর প্রায় ১৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে বলে খবর। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গতকালই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, বিপদ এখনো কাটেনি, আরেকটা দিন রিলিফ ক্যাম্পে থাকুন। কারণ ভরা কোটালের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হতে পারে বন্যা পরিস্থিতি। এই মুহূর্তে সেরকমই ইঙ্গিত দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরাও। কলকাতায় ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লকগেটগুলি। গতকালও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল আটটির বেশি লকগেট। আজ গঙ্গার জলস্তর বাড়তে পারে জেনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পৌরসভা।
বেলা ১২ টার দিকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেই। কারণ এই মুহূর্তে ইয়াসের শক্তি হ্রাস পেলেও তা নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আর সেই সূত্র ধরেই লাগাতার বৃষ্টি চলতে পারে আগামী ছয় সাত ঘন্টা। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ঝারখন্ড, বিহার এবং ওড়িশার বিভিন্ন উপকূলবর্তী জেলাতেও হতে পারে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদে। সাথে থাকবে ঝোড়ো হাওয়াও। তবে গতকালের তুলনায় তার গতিবেগ অনেকটাই কম হবে বলে জানাচ্ছে মৌসম ভবন।
একদিকে যেমন চাঁদিপুর এলাকায় ভেঙে পড়েছে বোল্ডার দিয়ে ঘেরা সমুদ্র বাঁধ, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর দোকান, হোটেল এবং ঘরবাড়ির। তেমনি অন্যদিকে জলস্তর বেড়েছে অজয় নদেও। আজই ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে পরীক্ষা করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে প্রশাসন। অন্যদিকে হুগলির তারকেশ্বর, হরিপাল, সিঙ্গুর, ধনিয়াখালি প্রভৃতি অঞ্চলে গতকাল থেকেই চলছে মুষলধারে বৃষ্টি। যদিও তেমন কোনো বড় ক্ষতির সম্মুখীন হননি কোন মানুষ। তবে রীতিমতো সমস্যা রয়েছে ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানা, কাকদ্বীপের মত এলাকাগুলিতে। যদিও তৎপরতার সঙ্গে ত্রাণকার্য চালাচ্ছে প্রশাসন। তবে আশঙ্কা রয়েছে আজও।
‘ভারত আজ পর্যন্ত অলিম্পিকে সোনা পায়নি …’ ভরা মঞ্চে বেফাঁস মমতা