বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০১৯ সালে মহাজোট এবং কংগ্রেসের বিরোধী হাওয়া সত্বেও প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসেবে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীকেই বেছে নিয়েছিল ভারতবাসী। শুধু তাই নয় প্রথমবারের তুলনাতেও অনেক বেশি আসন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে ছিল মোদী সরকার। কিন্তু এই দ্বিতীয় কার্যকালে মোদী সরকারের শাসন নিয়ে উঠেছে বেশ কিছু প্রশ্ন। একদিকে এনআরসি, সিএএর মত বিল, অন্যদিকে কৃষি বিল এবং করোনা কালে দেশকে মহামারী থেকে সামাল দেওয়া নিয়ে যথেষ্টই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। শুধু দেশীয় সংবাদ মাধ্যম নয়, বিদেশি সংবাদমাধ্যমও বারবার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, মোদী সরকারকে। এমনকি এই মুহূর্তেও সরকারের দ্বারা প্রকাশিত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সঠিক কিনা তা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। বিশ্বে এই মুহূর্তে বেকারত্বও প্রায় শেষ ৪৫ বছরের মধ্যে সবথেকে বেশি।
সেই কারণেই কিছুটা দাগ লেগেছে বিজেপি সরকারের জনপ্রিয়তায়। এই অবস্থায় কোন পদক্ষেপকে সবথেকে বেশি সফল বলে মনে করছেন দেশবাসী। তাই নিয়েই একটি সমীক্ষার আয়োজন করেছিল সমীক্ষক সংস্থা সি-ভোটার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হুবহু না মিললেও একুশে বাংলার নির্বাচনেও ট্রেন্ড কোন দিকে তা সঠিকভাবেই অনুমান করতে পেরেছিল তারা। তাই কিছুটা অবশ্যই গুরুত্ব পেতে পারে এই সমীক্ষা। মনে করিয়ে দিই, সি-ভোটারের এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে ৫৪৩ টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে।
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপঃ মোদী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ গুলির মধ্যে জনতার কাছে এই মুহূর্তে সাফল্যের শিখরে রয়েছে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করা। এই সিদ্ধান্ত যে সঠিক, তার পক্ষে রায় দিয়েছেন প্রায় ৪৭.৪% জনতা। ৩৭০ ধারা বাতিল করার ফলে কাশ্মীরের স্থায়ী সমস্যার সমাধান ঘটেছে এমনটা মনে করছেন দেশের প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষ। যদিও এই ধারা বিলোপ করার পর কাশ্মীরে একাধিক রাজনৈতিক টালমাটাল চলেছে। গ্রেপ্তার করতে হয়েছে তথাকথিত অনেক রাজনৈতিক নেতাকেই। জারি করতে হয়েছে কার্ফু। তবে এতে স্থায়ী সমস্যা সমাধান হয়েছে এবং দু’বছরে পরিস্থিতির আরো অনেক বেশি উন্নতি হয়েছে বলেই মনে করছেন ৬০% মানুষ।
বিদেশনীতিঃ মোদি সরকারের সময়ে পারস্পারিক বেশকিছু দেশের সঙ্গে সমস্যা দেখা দিয়েছে। খুশি নয় নেপালের মতো প্রতিবেশী অনেক দেশও। কিন্তু সার্বিকভাবে বিদেশনীতি অনেকটাই সফল তা মনে করছেন প্রায় ৬২.৩ শতাংশ মানুষ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য করোনার এই মহামারিতেও ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা, ইজরায়েলের মতো একাধিক দেশকে ভারতের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। ভোটারদের মত, এর কারণ মোদী সরকারের সুস্পষ্ট বিদেশনীতি।
রাম মন্দির নির্মাণঃ বিজেপির ইশতেহারে প্রথম থেকেই সামনের দিকে ছিল রাম মন্দির নির্মাণ। অবশেষে দ্বিতীয়বার সরকারে ফিরে এ বিষয়ে আরও তৎপর হয় সরকার। ইতিমধ্যেই রায় দিয়েছে আদালতও। সাথে সাথে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে অযোধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টের রায়েই রয়েছে সরকারের সাফল্য এমনটাই মনে করছেন প্রায় ২৩.৭ শতাংশ মানুষ।
ব্যর্থতা করোনা মোকাবিলা, তবে লকডাউনের সিদ্ধান্ত সহমত মানুষঃ
সরকারি করোনা মোকাবিলায় কিছুটা ব্যর্থ একথা মনে করলেও গতবছরের লকডাউনের সিদ্ধান্তে সহমত হয়েছেন দেশের প্রায় ৬৮.৪ শতাংশ মানুষ। এবছর মহামারী মোকাবিলায় দ্রুত লকডাউন করেনি সরকার। বরং তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলির উপরেই। দ্রুত লকডাউন না করারই সিদ্ধান্তকেও সমর্থন করেছেন প্রায় ৫৩.৪ শতাংশ মানুষ। যদিও ভ্যাকসিন বন্টনের নীতির ক্ষেত্রে সমীক্ষকদের চোখে ধরা পড়েছে যথেষ্ট পরিমাণ বিরোধিতা। সরকারি নীতিকে যেমন সমর্থন করেছেন ৪৮ শতাংশ মানুষ, তেমনি অসমর্থন করেছেন প্রায় ৪৪ শতাংশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিদেশে ভ্যাকসিন বন্টন নিয়ে ইতিমধ্যেই সরাসরি বিরোধ ধরা পড়েছেন দিল্লি সহ বেশকিছু শহরে। যার প্রভাব ফুটে উঠেছে এই সমীক্ষাতেও।
সব মিলিয়ে সরকারের এই দ্বিতীয় কার্যকালকে প্রথম কার্যকালের মতো ততটা সফল না মনে করলেও অনেক পদক্ষেপকেই বেশ সফল মনে করছেন মানুষ।