বাংলা হাট ডেস্কঃ অজানাকে জানার ইচ্ছা মানুষের বহুদিনের। সেই সূত্র ধরেই কখনও ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান কখনও বার্থোলোমিউ দিয়াজের মত নাবিকরা বেরিয়ে পড়েছেন দুঃসাহসিক সব সমুদ্র অভিযানে। সারা পৃথিবীতে আরও কতো নতুন দেশ আছে তা খুঁজে বের করাই তখন ছিল বড় লক্ষ্য। ১৭৭০ সালে এমনই এক দুঃসাহসিক সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে পড়েছিলেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী জেমস কুক। লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে নতুন কোন স্থলভাগ আবিষ্কার করা। তবে কোনো স্থলভাগ নয় তার হাত ধরে পৃথিবীর সামনে আসে আরেক নতুন জলভাগ। ৬০° অক্ষাংশে অবস্থিত এই বরফ ঢাকা জলভাগের নাম রাখা হয় সাউদার্ন ওসেন।
তবে বিশ্বজুড়ে ভূতত্ত্ববিদদের কাছে পরিচিতি পেলেও মহাসাগর হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি এই জলভাগ। অথচ প্রশান্ত, ভারত এবং আটলান্টিকের থেকে ছোট হলেও উত্তর মহাসাগরের তুলনায় অনেকটাই বড় এই অস্ট্রাল সাগর বা সাউদার্ন ওসেন। কিন্তু তাও ১৯১৫ সাল থেকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি যে মানচিত্র তৈরি করে আসছে তাতে মহাসাগর হিসেবে নাম নেই এই জলভাগের। অবশেষে চলতি বছরের ৮ জুন বিশ্ব মহাসাগর দিবসে মহাসাগর রূপে স্বীকৃতি পেল সাউদার্ন ওসেন বা দক্ষিণ মহাসাগর। পাশাপাশি দক্ষিণ মহাসাগরকে, পঞ্চম মহাসাগর হিসাবে চিহ্নিত করেছে ইউএস বোর্ড অন জিওগ্রাফিক নেমসও।
অতএব প্রায় দেড়শ বছরের গবেষণার ভিত্তিতে এখন পৃথিবীতে মহাসাগরের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর বিস্তৃতি আন্টার্টিকা উপকূল থেকে ৬০° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির ভূবিজ্ঞানী অ্যালেক্স টেইটের মতে, আন্তর্জাতিক চুক্তি না হওয়ার কারণেই এতদিন ধরে আটকে ছিল এই স্বীকৃতি। তবে দীর্ঘকাল ধরেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই সাগরের উপস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল। এমনকি ২০০০ সালে এর ভৌগলিক পরিসীমাও তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তারপরও কেটে গেল কুড়ি বছর। সব দেশ রাজি না থাকায় মহাসাগর রূপে স্বীকৃতি পায়নি দক্ষিণ মহাসাগর।
অ্যালেক্স টেইট এও জানান, এর আগে মানচিত্রে এই অংশটিকে আটলান্টিক মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরের শীতলতম অংশগুলি বলেই নেওয়া হতো। তবে পরে এই ভুল ভাঙে। তিনি এও জানান মানচিত্র প্রস্তুতকারক কমিটি বহুদিন ধরেই এ বিষয়ে বিতর্ক করে আসছে। তারা বহুকাল ধরেই বলে আসছেন এর ভৌগলিক অবস্থানের জন্য থেকে আলাদা মহাসাগর রূপে স্বীকৃতি দান করা উচিত। অবশেষে এই ২০২১ সম্পূর্ণ হলো সকলের বাসনা।