নিজের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়তে দেখেই মুখ খুললেন পূর্ব বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মণ্ডল

বাংলা হাট ডেস্কঃ একুশের নির্বাচন শেষ হতেই ফের একবার দল বদলুদের মধ্যে বেসুরো বাজছেন অনেকেই। একদিকে যেমন নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়ার ভিড় ছিল স্পষ্ট, তেমনই নির্বাচন শেষ হতেই, দল বদলুদের অনেকেই আবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখানোর জন্য মুখিয়ে উঠেছেন। ইতিমধ্যেই কাতর আবেদন জানিয়েছেন দীপেন্দু বিশ্বাস, সরলা মুর্মু, সোনালী গুহ সহ আরও অনেকেই। বিশেষত মুকুল রায় ফের একবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর জল্পনা তৈরি হয়েছে আরও বেশি। কয়েকদিন আগেই হঠাৎ বেসুরো হয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মণ্ডল।

২০১৯ সালে লোকসভায় বর্ধমান থেকে তৃণমূলের সাংসদ হিসেবে লোকসভায় গিয়েছিলেন সুনীল। কিন্তু একুশের নির্বাচনের আগে হঠাৎই বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। ইতিমধ্যেই তার সাংসদ পদ খারিজের জন্য লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে আবেদন জানিয়েছে তৃণমূল। আর তারপরে গতকালই সামনে এসেছে সুনীল মন্ডলের বড় বয়ান। আরও অনেকের মতই নিজের দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন সুনীল। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন,  ‘‘তৃণমূল থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না বিজেপি। সহ্য করতে পারছে না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনেকেরই ভুল হতে পারে। সবাই সবরকম হয় না। কিন্তু সকলকে আন্তরিক ভাবে গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু বিজেপি হয়ত মনে করছে এঁদের বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।’’

তার এই বক্তব্যের পর অনেকেই মনে করেছিলেন হয়তোবা ফের একবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন তিনি। সুনীলের দলবদল অবশ্য এই প্রথমবার নয়। এর আগেও ফরওয়ার্ড ব্লক থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছিলেন তিনি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের একবার জার্সি বদলে যোগদান করেন গেরুয়া শিবিরে। এবার গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে সরাসরি এই বার্তা দেওয়ায় অনেকেই মনে করেছিলেন হয়তোবা পুরনো দলে ফেরার পথ প্রশস্ত করতে চাইছেন পূর্ব বর্ধমানের এই সংসদ।

আর তার জেরেই সাধারণত তৃণমূল কর্মীদের ক্ষোভ প্রকাশিত হয় পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন অংশে। আমতা মোড় সহ জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় সুনীল বিরোধী পোস্টার। তাতে লেখা, “পূর্ব বর্ধমানের সাংসদ সুনীল কুমার মন্ডল ভোটের আগে জৌগ্রাম এসে তৃণমূল নেত্রীকে কুশ্রী ভাষায় আক্রমণ ও তৃণমূল দলকে চোরেদের দল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই বেইমান সাংসদ এখন ভোল পাল্টে তৃণমূলের ফিরতে চাইছেন। সাধারণ তৃণমূল কর্মীদের মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুরোধ ওই বেহায়া গদ্দার সাংসদকে দলে ফেরাবেন না।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য কিছুদিন আগেই দলে ফেরানোর সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিতে জানিয়েছিলেন , অনেকে আছেন নরমপন্থী যারা ভোটের সময় দলকে এভাবে আক্রমণ করেননি। তাদেরকে ফেরানোর কথা ভেবে দেখবে তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে জল্পনা। কয়েকদিন আগে সাধারণ তৃণমূল কর্মীরা মিছিল করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। তাকেও দোলেনা ফেরানোর আবেদন জানান তারা। সামনে এল সুনীল মণ্ডলের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাধারণ কর্মীদের আরজি। যদিও তার দিক থেকে এই কথার সাফ জবাব দিয়েছেন সাংসদ সুনীল মণ্ডল। তিনি পরিষ্কার বলেন, “‘আমি কি মুখিয়ে আছি নাকি? আমার পরিবার ভিখারি নয়। আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে কিছু করতে চাই না।”

একথা স্পষ্ট যে মুকুল রায় দলে ফেরার পর থেকেই ফোন যাচ্ছে অনেকের কাছে।যা নিয়ে এখন বেশ জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সংখ্যার সঠিক আন্দাজ করা মুশকিল হলেও এটা আন্দাজ করা মুশকিল নয় যে আগামী দিনে অনেকেই ফিরতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেসে। এখন সাধারণ কর্মীদের এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া কি হয় সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর