বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আলিপুরদুয়ারের বিজেপির সাংসদ জন বার্লা (John Barla) বিগত কয়েকদিন ধরেই চর্চায় রয়েছেন। আর ওনার চর্চায় থাকার প্রধান কারণ হল, তিনিই প্রথম উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য গড়ার দাবি করেছিলেন। এখন তিনি নতুন করে আবার চর্চায় উঠে এসেছেন। কারণ তিনি এখন শুধুমাত্র একজন সাংসদ নন, তিনি এখন দেশের মন্ত্রী। আলিপুরদুয়ার জেলা থেকে এই প্রথম কোনও সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেন। উনি এই গুরুদায়িত্ব পেতেই গোটা জেলার মানুষ আশায় বুক বাঁধছে। দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার অভিযোগ তলা আলিপুরদুয়ারবাসীরা এখন আর বঞ্চিত থাকতে চাইছেন না।
একসময় ফুটবলার ছিলেন জন বার্লা এরপর হয়ে যান চা শ্রমিক। জলপাইগুড়ির লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন জন। পাশাপাশি তিনি ভালো ফুটবলও খেলতেন। এরপর সেখান থেকে রাজনীতির ময়দানে। উনিশের লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকেটে জয়ী হয়ে এখন তিনি দেশের মন্ত্রী।
তবে জন বার্লার এই উত্থানের কাহিনী খুব একটা সহজ ছিল না। ফুটবলে ডিফেন্ডার হিসেবে বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে পৃথক গোর্খ্যাল্যান্ড আন্দোলনের বিরোধিতা করে শিরোনামে উঠে আসেন তিনি। ডুয়ার্স অঞ্চলের আদিবাসীদের একজোট করার পিছনে ওনার অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করার পাশাপাশি তিনি লড়ির খালাসি হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ২০০৭ সালে অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের হাত ধরে রাজনীতিতে নামেন জন। ডুয়ার্ডের প্রতিটি চা বাগানে সংগঠন মজবুত করার কাজে নেমে পড়েন তিনি। ২০১৬-এর নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে নাগরাকাটা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন। তবে সেবার তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূলের তৎকালীন নম্বর ২ মুকুল রায়, মন্ত্রী গৌতম দেবরা জন বার্লার বাড়িতে অহরহ যাতায়াত শুরু করেন। ওনাকে বিজেপি থেকে তৃণমূলের নিয়ে আসার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু সেক্ষেত্রে সফলতা হাসিল হয়নি। চিঠি পাঠিয়ে জন বার্লা জানিয়ে দেন তিনি বিজেপি ছাড়ছেন না।
এরপর বিজেপির কাছে জন বার্লার গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপিকে প্রতিহত করতে জনকে ৪৫ দিন জেলে রাখা হয়, কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। জনের গ্রামে বিজেপিই জয়লাভ করে।
এরপর ২০১৯ সালে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ওনার উপর আস্থা রেখে লোকসভার টিকিট দেয়। শীর্ষ নেতৃত্বর ভরসা ডোবাননি জন, তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী দশরথ তিরকেকে হারিয়ে প্রথমবার বড় জয় পান জন বার্লা। আর এখন তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উনি এই দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় চা শ্রমিক মহলে খুশির হাওয়া বয়ে গিয়েছে। একজন শ্রমিক জানান, ‘একজন সাধারণ চা শ্রমিক আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। আমরা চাই উনি আমাদের উন্নতির জন্য কাজ করুক।”