জল থইথই চারিদিক, বন্যায় ভেসেছে বাড়ি! তবুও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছে বর্ণালীর

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ চারিদিকে জল থইথই, কেলেঘাইয়ের বাঁধ ভাঙা জলে ভেসেছে ঘর। কোনক্রমে উঁচু বাঁধের উপরে ত্রিপল টানিয়ে রয়েছে তাঁরা। এরই মধ্যে বর্ণালী মিশ্রর (barnali mishra) কাছে ফোন এল, মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে তাঁর স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের আবেদন। একদিনের মধ্যেই তমলুক গিয়ে নিয়ে আসতে হবে সেই কার্ড।

এই খবর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে বর্ণালী মিশ্র। কিন্তু বন্যার জল তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। নার্স হওয়ার স্বপ্নকে সত্যি করতে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে, কোমর সমান জল ঠেলে প্রায় দশ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে তমলুকে জেলাশাসকের দফতর থেকে নিজের কার্ড নিয়ে আসেন বর্ণালী মিশ্র।

ভগবানপুর যাওয়ার পথে আট কিলোমিটার দূরে নচ্ছিপুর। সেখানেই পালপাড়া যোগদা সৎসঙ্গ বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন বর্ণালী মিশ্র। এরপর প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে বেঙ্গালুরুতে নার্সিং কলেজে পড়ার সুযোগও পান তিনি। সেই কারণেই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড লোনের জন্য আবেদন করেছিলেন।

FB IMG 1625080801715

এরই মধ্যে তাঁর কাছে লোনের আবেদন মঞ্জুরের ফোন আসে এবং বলা হয় এক দিনের মধ্যেই তমলুকে গিয়ে সংগ্রহ করতে হবে ওই কার্ড। ফোন পেয়ে খুশি হলেও, জলমগ্ন এলাকা থেকে কিভাবে সেখানে পৌঁছবে সেই চিন্তা করতে থাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও হার মানেনি বর্ণালী।

শুরু হয় দীর্ঘ যাত্রা। সাইকেলে করে প্রথমে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে ভাগবানপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করলেও, রাস্তায় কোমড় সমান জলের মধ্যে কখনও গামছা পরে হেঁটে, আবার কখনও সাইকেল কাঁধে নিয়ে পার হয় মেয়ে এবং বাবা। তারপর প্রায় ৩ ঘন্টা রাস্তা যাওয়ার পর নরঘাটে পৌঁছে ভিজে জামা বদলে বাসে ওঠেন তাঁরা দুজনে।

বর্ণালী জানায়, ‘এই লোনটা না পেলে, আমার পড়ার সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যেত’। এবিষয়ে বর্ণালীর বাবা রমাপদ মিশ্র জানান, ‘মেয়ের পড়াশুনায় কোনরকম বাঁধা আসুক, তা আমি চাইনি। আর ওঁর জেদও কিছু কম নয়। সেইসঙ্গে জেলাশাসকের অফিসে গিয়ে বাড়ি মেরামতের অনুদানের জন্যও আবেদন করে এলাম’।

Smita Hari

সম্পর্কিত খবর