বাংলাহান্ট ডেস্কঃ রক্ত মাংসের মানুষের শরীরে রোগ ভোগ থাকবে না, তা তো হতে পারে না। হিসেব করলে দেখা যায়, জীবনের অনেকটা সময়ই হয়ত আমরা নানারকম রোগে ভুগে থাকি। আর তার জন্য দারস্থ হই চিকিৎসকের। চিকিৎসকের পরামর্শ মত ওষুধ তো কেনা হয় ঠিকই, কিন্তু তার সবটা কি আর খাওয়া হয়?
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, একটু সুস্থ হয়ে ওঠার পরই আর ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করেন না। যার ফলে, বাকি ওষুধটার জায়গা হয় কোন আলমারির অন্ধকার ড্রয়ারে। আর কিছুদিন পর পুরনো জিনিস খুঁজতে গিয়ে, সেই ওষুধ হাতে আসতেই দেখা যায় পেরিয়ে গিয়েছে এক্সপায়ারি ডেট। আর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর জায়গা হয় ডাস্টবিনে।
একবারই কি ভেবে দেখেছেন, আপনার এই নষ্ট করা ওষুধটি সঠিক সময়ে অপর কোন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারতো! না সাধারণ চিন্তাধারাই অনেকেই এটা ভাবেন না। কিন্তু এটাকেই বর্তমানে জীবনের লক্ষ্য করে নিয়েছেন ‘মেডিসিন বাবা’। এই ‘মেডিসিন বাবা’র আসল নাম ওঙ্কার নাথ শর্মা (Omkar Nath Sharma)। যিনি বছর ৮০-র একজন কর্মযোগী।
কর্মসূত্রে উত্তর প্রদেশের গ্রেটার নইডার কৈলাস হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের একজন টেকনিশিয়ান ছিলেন তিনি। সংসারে রয়েছে স্ত্রী এবং এক মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে। চাইলেই তিনি জীবনের এই শেষ কটা দিন আরাম করেই কাটাতে পারতেন। কিন্তু না, বেছে নিলেন এক মহৎ কাজের পথ।
দিল্লীর মঙ্গলপুরী বস্তি এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে ভোর ৬ টায় গেরুয়া পোশাক পরিধান করে, সারা দিনে ৫ থেকে ৬ কিমি রাস্তা হেঁটে হেঁটে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে বেড়ান তিনি। সঙ্গে উচ্চস্বরে হাঁক দেন, ‘যো দাওয়াইয়া আপকে কামমে নেহি আ রাহি হ্যাঁয় দান কিজিয়ে/ কৈ বেকার কে দাওয়াইয়া দান করেঙ্গে’। বিগত ১৩ বছর ধরে মানুষের বাড়িতে থাকা অব্যবহৃত ওষুধ, যেগুলোর এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি, তা সংগ্রহ করে চলেছেন তিনি। পেয়েছেন ২০১৬ সালে দিল্লী সরকারের কাছ থেকে ‘দিল্লী গৌরব’ পুরস্কার এবং আরো অনেক সম্মান।
সারা দিনের এই ভিক্ষা করা এই ওষুধের নাম, নষ্ট হওয়ার সময়সীমা, ওষুধ প্রাপ্তির স্থান সবটাই লিখে রাখেন নিজের কাছে। তারপর বিনামূল্যেই তা বিলিয়ে দেন কোন গরীব দুঃখীদের মধ্যে, কিংবা কোন সরকারি হাসপাতালে বা বিভিন্ন এন জি ও তে বা ক্লিনিকে। বাঁচিয়েছেন হাজার হাজার মানুষের প্রাণ।
তাঁর কথায়, ‘২০০৮ সালে দিল্লী মেট্রোর একটা নির্মীয়মান ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর ২ জন শ্রমিক নিহত এবং প্রচুর মানুষ আহত হয়েছিলেন। সেইসময় দেখেছিলাম, স্থানীয় হাসপাতাল শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাঁদের ছেড়ে দিয়েছিল। এমনকি ক্ষত স্থান সারিয়ে তোলার জন্যও কোন ওষুধ দেয়নি। তখন থেকেই আমি এই পরিকল্পনা করি’।