বাংলাহান্ট ডেস্ক : পুরভোটের আগে যেন ঝামেলা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না তৃণমূলের। একের পর এক ঝঞ্জাটে ব্যতিব্যস্ত ঘাসফুল শিবির। এবার সাংসদ সৌগত রায়কে বিঁধে তীব্র কটাক্ষ করে মুখ খুললেন মদন মিত্র। মমতা এবং অভিষেকের মাঝখানে ঢুকে দল ভাঙাতে চেষ্টা করছেন তিনি এই অভিযোগও শোনা গেল কামারহাটির বিধায়কের গলায়। এমনকি কামারহাটিতে এসে দেখান বলে পরিষ্কার হুমকিও দিতে দেখা যায় তাঁকে।
এদিন রীতিমতো সৌগত রায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মদন। নাম না করেই দমদমের সাংসদকে উদ্দেশ্য করে মদন মিত্র বলেন, ‘ এক নেতা ছিলেন, তিনি একসময় বলতেন মমতার বাবার ঠিক নেই। কতবার দল পাল্টেছেন ঠিক নেই। তারপরও বড় পদ পেয়েছেন তৃণমূলে। যে নেতা এককালে বলেছিলেন মমতার বাবার ঠিক নেই সেই নেতাই আজ দলে বড় পদ পেয়ে বসে আছেন। বটি কাবাব খাচ্ছেন আর দলে ভাঙন ধরাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করব আপনি নিজে হস্তক্ষেপ করুন। নয় বার সাংসদ হয়েছেন। যখন যেখানে পারছেন চলে যাচ্ছেন। রাতে একটা দিনে আরেকটা। এসব নেতারা এভাবে থাকলে দলের ক্ষতি হচ্ছে।’
মদনকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘ কামারহাটিতে প্রোমোটারি রাজ চলছে। প্রোমোটাররা চেয়ার পার্সেনের ঘরে গিয়েই বসে আছেন। এক নেতা তিনি লোক পাঠাচ্ছেন। চেয়ারপার্সন আর কী করবে! একটা বাড়ির পাশে ব্যাঁকা বাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কীভাবে হল এরকমটা? খালি কোথা থেকে কীভাবে খাওয়া যায় সেই চিন্তা! আমি কোনওদিন বলিনি, ক্যবিনেটে পাশ হয়ে গিয়েছে, কামারহাটিতে কর্পোরেশন হবে, বাইরে এসে ধুতি পরা নেতা বিবৃতি দিচ্ছেন দমদম কর্পোরেশন হবে। কেন ওখানে মালকড়ি বেশি পাওয়া যাবে বলে? কাজুবাদাম, বিরিয়ানি, বটি কাবাব খেয়ে লুঙ্গি তুলে মালিশ করে প্রার্থীর নাম দিয়েছেন, আপনার যদি সাহস থাকে তাহলে কামারহাটির কাছে বিটি রোড দিয়ে যাতায়াত করে দেখান। কামারহাটির মানুষ আপনাকে বুঝে নেবে।’
সম্প্রতি প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকে একের পর এক ঝামেলায় জেরবার তৃণমূল। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি কোন থেকে অভিযোগ এসেছে প্রার্থী তালিকার বিরুদ্ধে। এবার কামারহাটির ৩৫ টি ওয়ার্ডের প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মদন মিত্র নিজেই। পরিচিত মুখদের সরিয়ে অপরিচিত মুখদের প্রার্থী করা হচ্ছে কোনো এক নেতার সুপারিশে, এমনটাই অভিযোগ এনেছেন তিনি।
মদনকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি এখানে একটা কথা বলে যাচ্ছেন, তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে বসে সিগারেট খেতে খেতে আরেকটা কথা বলে দিচ্ছেন। একেবারে ভুল শংসাপত্র ধরিয়ে দিচ্ছেন! নেত্রীকেই বিভ্রান্ত করছেন, ভুল রিপোর্ট দিচ্ছেন! কেন করছেন এরকম? কোনও ঠিক ঠিকানা নেই আপনার! আজ এখানে কাল সেখানে! আমায় ধমকিয়ে চমকিয়ে কোনও লাভ হবে না। আমি তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছি। তৃণমূলের হয়েই থাকব। দল যা বলবে তাই করব। শুধু দেখব, নির্দেশ কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে এসেছে। ব্যস! মদন মিত্র এরকমভাবে দল পাল্টায় না!’
সম্প্রতি দলের অন্দরে বিতর্কের জেরে ফেসবুক ছাড়ার কথা জানান তৃনমুলের কালারফুল বয় মদন মিত্র। কিন্তু এদিন আবারও ফেসবুক লাইভে দেখা গেল তাঁকে। এদিন দুপুর নাগাদ একটি লাইভ করে কামারহাটি এলাকার সমস্ত নেতা কর্মীদের একটি খোলা বৈঠকের জন্য ডাকেন তিনি। তারপর সেই বৈঠকেই রীতিমতো একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটাতে দেখা যায় মদনকে।
মদনের এহেন বক্তব্যে দলের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হলেও এখনও কোনোরকম প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যায়নি সৌগত রায়ের তরফে। তবে পুরভোটের আগে দলের অন্দরে এহেন কোন্দলে যে প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে দলের ভাবমূর্তির তা বলাই বাহুল্য। পুরসভা দখলের লড়াইতে এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চলেছে বিরোধীরা, এমনতাই মত পর্যবেক্ষক মহলের।