সন্ত্রাস মুক্ত পুরসভা গড়ার লক্ষ্যে বিরোধীদের বন্ধুত্বের আহ্বান জানালেন সৌমিত্র খাঁ

বাংলাহান্ট ডেস্ক : বাঁকুড়ার পুরভোট প্রসঙ্গে এবার সরব হলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। সম্প্রতি এবং রাজনৈতিক বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের ডাক দিলেই তিনি। সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এদিন পুরভোটে তৃণমূল কারচুপি করছে এই অভিযোগে সরব হলেও যেন সম্প্রতির সুরই বেশি ধরা পড়ল তাঁর গলায়। একই সঙ্গে পুরভোটে ব্রাত্য তৃণমূল নেতাদের বিজেপিতে আহ্বান করতেও দেখা যায় তাঁকে।

সমস্ত বিরোধী দলগুলিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাঁকুড়ায় যেভাবে মনোনয়ন পর্ব শেষ হল তাতে তৃণমূল, সিপিএম কংগ্রেস এবং সর্বোপরি ভারতীয় জনতা পার্টিকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। যেভাবে শান্তিপূর্ণ ভাবে এখানে সবকিছু হল তা দেখার মতন।’ একই সঙ্গে তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে দেখা যায় বাঁকুড়া জেলা পুলিশকেও।

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন দেবব্রত ঘোষ। গতকাল একটি সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থীপদে কারচুপির অভিযোগ আনেন সৌমিত্র খাঁ। তিনি বলেন, ‘ আমরা জানি ভারত সরকারের নিয়ম অনুয়ায়ী মানুষের একটি জায়গায় ভোটার কার্ড থাকে। সেখানে আমরা দুটি জায়গায় তাঁর ভোটার কার্ড দেখতে পেলাম। সল্টলেকের বাসিন্দা হয়ে দেবব্রত ঘোষ কীভাবে বিষ্ণুপুরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হলেন সেটাই আমরা ভাবছি।’ অভিযোগ আনা সত্ত্বেও সেই তথাকথিত বিরোধীসুলভ বিদ্বেষ যেন ছিল না তাঁর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘স্ক্রুটিনি চলছে। আশা করছি কোনো প্রার্থীরই প্রার্থীপদ বাতিল হবে না।

‘ তবে তৃণমূল কংগ্রেসের কলকাতার নেতারা সারাদিন মহকুমা শাসকের অফিসে বসে ছিলেন বলেও জানিয়েছেন সৌমিত্র। ব্যাপারটিকে অশোভনীয় বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘পাঁচ মিনিট-সাত মিনিট-দশ মিনিট কোনো মিটিং চলতেই পারে। কিন্তু সারাক্ষণ বসে থাকা কেন? এই সারাক্ষণ বসে থেকে ইভিএম মেশিন বদল করা হবে না তো? ভোট লুঠ করা হবে না তো? এই জায়গাটিতে আমরা দ্বিধাগ্রস্ত রয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সোনামুখিতে শাসকদল বহুবার বলেছে বাইপাস বানাবে। কিন্তু কিছুই বানানো হয়নি৷ এলাকার মানুষকে একটাই কথা বলব, সিপিএম নেতারাও তৃণমূলে যোগ দিয়ে টিকিট পেয়েছেন, তাই আপনারা ভারতীয় জনতা পার্টিকে সমর্থন করুন।’

saumitrakhan 1627286022

বাঁকুড়ার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদেরকেও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আহ্বাব জানান তিনি। বিষ্ণুপুরের সাংসদকে বলতে শোনা যায়, ‘২০০৯ সাল থেকে যে সমস্ত কর্মীরা বিষ্ণুপুরে তৃণমূলের খুঁটি শক্ত করেছেন, দলের হয়ে লড়েছেন, অথচ দল আপনাদের বদলে কিছুই দেয়নি, বাঁকুড়ার সার্বিক সার্থে তাঁরা বিজেপির উপর ভরসা রেখে দেখুন। বিজেপি আপনাদের সম্মান দেবে।’ তৃণমূল কংগ্রেস বাঁকুড়ায় দ্বিতীয় স্থান পাবে বলেও দাবি করতে দেখা যায় তাঁকে। বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুরের উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আবারও বলেন, ‘বিষ্ণুপুর হেরিটেজ সিটি। এখানে আবারও মন্দির সংস্কার এবং সংরক্ষণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এই হেরিটেজ হওয়ার কারণে আমরা কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে একাধিক প্রকল্পের ফান্ড পাব। যা উন্নয়নের কাজে লাগবে। কিন্তু তৃণমূল কখনওই ওই ফান্ড কেন্দ্রের কাছ থেকে চাইতে যাবে না। তৃণমূলকে ভোট দিয়েও কোনো লাভ নেই এখানে। কারণ তারা জিতলেও উন্নয়ন হবে না, তৃণমূলের কোনো ফান্ড নেই।’

এদিন কার্যতই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতা পূর্ণ রাজনৈতিক লড়াইয়ের আহ্বান জানান তিনি বিরোধীদের কাছে। তিনি বলেন,’আমরা রাজনৈতিক লড়াই করি,ব্যক্তি লড়াই নয়। যেভাবে এই কদিন সরকার পক্ষ আমাদের সাহায্য করল তা সত্যিই অতুলনীয়। বিজেপির নেতৃত্বকে বলছি, কোনো বিরোধী দলের কাউকেই কোনো রকম হুমকি দেবেন না।’

পুরভোটের আবহে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি-তৃণমূল বিবাদ তুঙ্গে রাজ্যজুড়ে। এহেন পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতার এহেন বক্তব্য যে রাজনীতির ময়দানে সম্প্রতির এক ঝলক খোলা হাওয়া হয়েই এল, তেমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।

Katha Bhattacharyya

সম্পর্কিত খবর