বাংলাহান্ট ডেস্ক : ক্ষমতায় এলে রাজ্যে লাগু করা হবে ইউনিফর্ম সিভিল কোড, এদিন বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের মঞ্চ থেকেই এহেন ঘোষণা করলেন উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। বিধানসভা নির্বাচন কড়া নাড়ছে রাজ্যের একাধিক রাজ্যের দুয়ারে। দুদিন পর আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট শুরু দেবভূমি উত্তরাখন্ডেও। তার আগেই নির্বাচনী প্রচারে এহেন ইস্তেহার করতেই দেখা গেল সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। বিজেপি আবারও ক্ষমতায় এলে সবার জন্য এক আইন লাগু করার কথাই জানালেন তিনি।
কী এই ইউনিফর্ম সিভিল কোড?
ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানী বিধি হল ভারতীয় নাগরিকদের জন্য এমন একটি আইন যা দেশের সকলের জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে একই ভাবে প্রযোজ্য হয়। এই বিধি অনুসারে দেশের প্রতিটি মানুষ একই নিয়ম মেনে বিয়ে, বিচ্ছেদ, দত্তক এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার ইত্যাদি করতে পারবেন। ভারতে এই সিভিল কোড প্রণয়েই সচেষ্ট বিজেপি।
এই প্রসঙ্গে উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই প্রথম একটি কমিটি তৈরি করবে বিজেপি সরকার। সেই কমিটিই ইউনিফর্ম সিভিল কোডের একটি খসড়া তৈরি করবে। এই নিয়ম কার্যকর হলে সব ধর্মের মানুষদের জন্যই বিয়ে, বিচ্ছেদ, জমি অধিগ্রহণ, প্রভৃতি সহ একাধিক ক্ষেত্রে একই নিয়ম কার্যকর হবে। আলাদা ধর্মের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা নিয়ম থাকবে না।’
তিনি আরও জানান, ‘নতুন করে বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর যত দ্রুত সম্ভব এই বিধি লাগু করা হবে। দেবভূমির সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের প্রধান কর্তব্য এবং এতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবাইকে সমান অধিকার দান করতেই অতি দ্রুত এই নিয়ম কার্যকর করতে চাইছি আমরা’।
#WATCH | “Soon after its swearing-in, new BJP govt will form a committee to prepare draft of Uniform Civil Code in state. This UCC will provide for same laws regarding marriages, divorce, land-property & inheritance for all people, irrespective of their faith” says Uttarakhand CM pic.twitter.com/83SYlH2AkE
— ANI UP/Uttarakhand (@ANINewsUP) February 12, 2022
উত্তরাখন্ডে ক্ষমতায় এলে এই বিধি লাগু করতে চায় বিজেপি। এই ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু হলে প্রতিটি ধর্মের মানুষকেই মেনে চলতে হবে এক বিধি। হলে কার্যতই মূল্যহীন হয়ে পড়বে শরিয়তি ও মুসলিম পার্সনাল ল। বিজেপির দাবি এই বিধি কার্যকর হলে রাজ্যের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। কমবে হিংসা, লিঙ্গ বৈষম্য ইত্যাদির মত ঘটনাও। একই সঙ্গে নারী মর্যাদা এবং রাজ্যের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখতেও এই বিধি কার্যকর হবে বলেও দাবি করেছে গেরুয়া শিবির।
ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ভারতের সংবিধান প্রতিটি মানুষকে নিজের নিজের ধর্মচারণ এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে নিজেদের নিয়ম কানুন মেনে চলার অধিকার প্রদান করে। সেখানে মুসলিম আইন এবং অন্যান্য নিয়ম কানুনকে মুছে ফেলতে চেয়ে বিজেপির এই এক বিধি আনার প্রচেষ্টায় সমালোচনার ঝড় বিরোধী মহলে। ব্যাপারটিকে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের রূপভেদ হিসেবেই আখ্যা দিতে চান বিরোধীদের একাংশ। যদিও ২০১৭ তে উত্তরাখন্ডে বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পর সে রাজ্যে শক্তি বেড়েছে বিজেপির। উত্তরাখন্ডের অধিকাংশ জনসংখ্যাই হিন্দু। তাই সেখানে দাঁড়িয়ে নির্বাচনী ইস্তেহারে এহেন প্রতিশ্রুতি কতখানি বিজেপির কাজে আসে সেটাই এখন দেখার। প্রসঙ্গত উত্তরাখন্ডে নির্বাচনের ফল প্রকাশ হবে আগামী ১০ মার্চ।